একটি শিশু যখন জন্মায়, তখন আশপাশের মানুষজনের কথা শুনে শুনে নিজেও কথা বলতে শিখে। শ্রবণের মাধ্যমেই শিশু কথন অর্থাৎ, যোগাযোগের প্রাথমিক দক্ষতা অর্জন করে। কোনো শিশু যদি কানে শুনতে না পায়, তাহলে তার কথন বা যোগাযোগ দক্ষতা বিকশিত হয় না।
যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রবণ একটি প্রক্রিয়া এবং বাচনিক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ধরণের যোগাযোগেই শ্রবণের প্রয়োজন হয়। কার্যকর শ্রবণ ব্যতিত যোগাযোগ কখনোই ফলপ্রসূ হয় না।
শ্রবণ – Listening
সাধারণার্থে আমরা শ্রবণ বলতে বুঝি ‘শোনা’। তবে শোনা এবং শ্রবণ একই বিষয় নয়। প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে যত আওয়াজ হয়, তার সবই মনোযোগ দিয়ে কিংবা আনমনে শুনে থাকি। শোনার এই কাজটি শ্রবণের একটি অংশ, পরিপূর্ণ শ্রবণ নয়।
শ্রবণ মূলত একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রবণ মানে কেবল ‘শোনার জন্য শোনা’ নয়। বরং মনোযোগ সহকারে কিছু শোনা, তা বোঝা ও স্মরণ রাখা এবং মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানানোর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হচ্ছে শ্রবণ।
ম্যারিয়াম-ওয়েবস্টার অভিধান মতে, শ্রবণ হলো – কোনো শব্দ বা আওয়াজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া, দৃঢ় মনোযোগের সাথে কিছু শোনা: বিবেচনায় নেয়া, সতর্কতার সাথে প্রত্যাশিত শব্দ শোনার প্রচেষ্টা ইত্যাদি।1উদ্ধৃতি: “To pay attention to sound, To hear something with thoughtful attention: give consideration, To be alert to catch an expected sound”; অভিধান: Merriam-Webster.com; প্রকাশনী: Merriam-Webster, Inc.;
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জোসেফ এ ডেভিটো তাঁর ‘The Communication Handbook: A Dictionary’ অভিধানে শ্রবণের বর্ণনায় লিখেছেন – “(শ্রবণ হচ্ছে) শ্রবণেন্দ্রিয় সংক্রান্ত উদ্দীপনা প্রাপ্তির একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া। লোকে যাই বলুক, শোনা নিষ্ক্রিয়ের চেয়ে অধিকতর সক্রিয় একটি প্রক্রিয়া। শ্রবণ নিজে নিজেই ঘটে যায় না, আমাদের সক্রিয়ভাবে এটি ঘটাতে হয়। শোনার জন্য শক্তি লাগে এবং অধ্যবসায়ের প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন পড়ে।
শ্রবণে উদ্দীপনা প্রাপ্তি জড়িত এবং একারণে তা অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া থেকে ভিন্ন। প্রাপ্তি শব্দটি দ্বারা এখানে বোঝানো হয়েছে, শ্রোতা কর্তৃক উদ্দীপনা গ্রহণ এবং কোনোভাবে তা প্রক্রিয়াজাত বা ব্যবহার করা। অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও প্রাপ্ত সংকেত যাতে শ্রোতার দ্বারা বিবেচিত হয়।
শোনার সাথে শ্রবণ উদ্দীপনা জড়িত, অর্থাৎ, কান দিয়ে শোনা সংকেত (শব্দ তরঙ্গ)। শ্রবণ তাই মৌখিক সংকেতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বাতাসের ওঠানামার মাধ্যমে প্রেরিত কোলাহল এবং শব্দ, সঙ্গীত এবং গদ্য, সকল সংকেতই শ্রবণ করা যেতে পারে।”2উদ্ধৃতি: “Listening is an active process of receiving aural stimuli. Contrary to popular conception, listening is an active than a passive process. Listening doesn’t just happen; we must make it happen. Listening takes energy and a commitment to engage in often difficult labor. Listening involves receiving stimuli and is thus distinguished from hearing as a physiological process. The word receiving is used here to imply that stimuli are taken in by the listener and are in some way processed or utilized. For at least some amount of time, the signals received are retrained by the listener. Listening involves aural stimuli, that is, signals (sound waves) received by the ear. Listening therefore is not limited to verbal signals but encompreasses all signals sent by means of fluctuations in air – noises as well as words, music as well as prose.”; অভিধান: The Communication Handbook: A Dictionary; লেখক: Joseph A. Devito; প্রকাশনী: Harper & Row, New York; প্রকাশকাল: ১৯৮৬;
শ্রবণের এই ব্যাখ্যামূলক অর্থ বিবেচনায় ‘শোনা’ থেকে ‘শ্রবণ’-কে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে প্রায়ই ‘সক্রিয় শ্রবণ’ শব্দদ্বয় ব্যবহার করা হয়। যোগাযোগ অধ্যয়নের স্বীকৃত পরিভাষা ‘সক্রিয় শ্রবণ’ বা ‘Active Listening’ সম্পর্কে জোসেফ এ ডেভিটো লিখেছেন –
“(সক্রিয় শ্রবণ হলো) প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে বক্তা যা বলতে চেয়েছেন, শ্রোতা হিসেবে আপনি তা থেকে কি অর্থ এবং অনুভূতি পেয়েছেন, সেটি জানানো। সক্রিয় শ্রবণের ক্ষেত্রে বাচনিক এবং অবাচনিক – উভয় ধরণের সংকেতই বিবেচনায় রাখতে হয়। সক্রিয় শ্রবণ কেবল প্রত্যুত্তরের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বাচনিক এবং অবাচনিক, অর্থ এবং অনুভূতি সহ বক্তার সম্পূর্ণ বার্তার বিপরীতে শ্রোতার অর্থপূর্ণ প্রতিক্রিয়া প্রকাশই সক্রিয় শ্রবণ।”3উদ্ধৃতি: “Active listening is a process of sending back to the speaker what you as a listener think the speaker meant – both in terms of content and in terms of feelings, active listening takes into consideration both verbal and nonverbal signals, active listening is not a process of merely repeating back to the speaker the exact words, but rather one of putting together in some meaningful whole the listener’s understanding of the speaker’s total message – the verbal and the nonverbal, the content and the feelings.”; অভিধান: লেখক: Joseph A. Devito; প্রকাশনী: Harper & Row, New York; প্রকাশকাল: ১৯৮৬;
জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি-র ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রিচার্ড নর্ডকুইস্ট-র মতে, “শ্রবণ হচ্ছে বাচনিক (এবং কখনো অবাচনিক) বার্তা গ্রহণ এবং প্রতিক্রিয়া জানানোর একটি সক্রিয় প্রক্রিয়া।… বক্তা যা বলেছে, কেবল তা শুনে যাওয়াই শ্রবণ নয়।”4উদ্ধৃতি: “Listening is the active process of receiving and responding to spoken (and sometimes unspoken) messages. Listening is not just hearing what the other party in the conversation has to say.”; নিবন্ধ: The Definition of Listening and How to Do It Well; লেখক: Richard Nordquist; প্রকাশনী: ThoughtCo.com; প্রকাশকাল: ২০২০;
লেখক এলিস ডুয়ের মিলারের ভাষ্য, “শ্রবণ হলো আমাদের যা বলা হয়েছে, তার প্রতি মনোযোগী ও মানবিক আগ্রহ তৈরির প্রক্রিয়া। আপনি একটি ফাঁকা দেয়ালের মতও শুনে যেতে পারেন কিংবা একটি জমকালো অডিটোরিয়ামের মত করেও শুনতে পারেন, যেখানে প্রতিটি শব্দ আরও জোরালো এবং সমৃদ্ধ হয়ে ফিরে আসে।”5উদ্ধৃতি: “Listening means taking a vigorous, human interest in what is being told us. You can listen like a blank wall or like a splendid auditorium where every sound comes back fuller and richer.”; লেখক: Alice Duer Miller;
শ্রবণ প্রক্রিয়া যোগাযোগের একটি বিশেষ দক্ষতাও, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা পেশাগত জীবনে সক্রিয় শ্রবণ দক্ষতা ব্যতিত কার্যকর যোগাযোগ ব্যর্থ হয় এবং কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন কঠিন হয়ে যায়।
শ্রবণ প্রক্রিয়ার ধাপ – Steps of Listening Process
শ্রবণ প্রক্রিয়া মূলত একটি মানসিক এবং যোগাযোগ দক্ষতা। শোনা, বোঝা, প্রতিক্রিয়া জানানোর মত কয়েকটি ধাপে শ্রবণের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সাধিত হয়। জোসেফ এ ডেভিটো ‘Essentials of Human Communication’ গ্রন্থে শ্রবণ প্রক্রিয়ার পাঁচটি ধাপ উল্লেখ করেছেন।6গ্রন্থ: The Essential of Human Communication; লেখক: Joseph A. Devito; প্রকাশনী: Pearson Publication; প্রকাশকাল: ১৯৯৩; ধাপগুলো হচ্ছে –
- গ্রহণ – Receiving
- বোঝা – Understanding
- মনে রাখা – Remembering
- মূল্যায়ন – Evaluating
- প্রতিক্রিয়া – Responding
গ্রহণ – Receiving
শ্রবণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হলো গ্রহণ বা শোনা। এই ধাপে বক্তা বা উৎস হতে প্রাপ্ত শব্দ শ্রোতা কানের মাধ্যমে গ্রহণ করে বা শুনে থাকে। অর্থাৎ, এই ধাপে শ্রোতা কেবল শব্দ গ্রহণ করে থাকেন। গ্রহণ শেষে শ্রবণের প্রথম ধাপও শেষ হয়ে যায়।
শোনার ক্ষেত্রে বক্তা যা বলেছে, শ্রোতা কেবল তা-ই গ্রহণ করে না; যা বলা হয় নি – এমন তথ্যও গ্রহণ করতে পারে। এতে বিভ্রান্তি বা ভিন্ন অর্থ গ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি হয়। বক্তার বক্তব্য সঠিকভাবে গ্রহণ না করলে শ্রবণের পরবর্তী ধাপগুলোও যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়। গ্রহণ বা শোনার ধাপটি যত নিখুঁত হবে, শ্রবণ প্রক্রিয়া ততই পরিপূর্ণ হবে।
এই ধাপটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বক্তার বাচনিক এবং অবাচনিক, উভয় ধরণের বার্তায় মনোযোগ দিয়ে হবে। বক্তার বাচনিক বার্তায় যা প্রকাশ পায় নি, অবাচনিক বার্তায় তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন, বক্তা ‘সে ঐদিকে গিয়েছে’ বলে হাত দিয়ে ডান দিকে ইশারা করলো। এই অবাচনিক বার্তাটি শ্রোতাকে বুঝে নিতে হবে।
বার্তা গ্রহণের সময় শ্রোতা কথা বললে বক্তার প্রতি মনোযোগ হারাতে পারেন, বক্তাও পরিপূর্ণ বার্তা প্রদানে বাঁধা প্রাপ্ত হন। তাই, বার্তা গ্রহণ বা শোনার সময় শ্রোতার উচিত একনিষ্ঠভাবে শোনা বা সক্রিয় শ্রোতার ভূমিকা পালন করা।
বোঝাপড়া – Understanding
বার্তা গ্রহণের পর আসে তা বোঝার পালা। এই ধাপে বক্তা তার বার্তায় বাচনিকভাবে যা প্রকাশ করেছে এবং অবাচনিকভাবে যা বুঝাতে চেয়েছে, উভয়ই বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বক্তব্যটি পরিপূর্ণভাবে বুঝে নিতে হবে।
কথা বলার সময় বক্তার গলার স্বর, হাত নাড়ানো, চোখের ভাব, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি অবাচনিক সংকেত বার্তাকে অর্থবহ এবং সহজতর করে। তাই বাচনিক বার্তা বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে অবাচনিক বার্তা বা সংকেতগুলোও বিবেচনায় রাখা জরুরি।
বোঝাপড়ার এই ধাপে বক্তার প্রেরিত বার্তা শ্রোতা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা বিশ্লেষণ করতে পারে। জটিল বার্তার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শ্রোতার উচিত বার্তাটি পুনরায় শোনা। বক্তারও উচিত শ্রোতা ভালোভাবে বার্তাটি বুঝেছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া।
স্মরণ – Remembering
বক্তার প্রেরিত বার্তা শ্রোতা কর্তৃক স্মরণ বা মনে রাখা শ্রবণের অন্যতম একটি ধাপ। এই পর্যায়ে কার্যকর শ্রবণের মাধ্যমে বার্তাটি মনে রাখতে হবে। তবে, ‘স্মরণ’ বা মনে রাখা মানে যা বলা হয়েছে, তা হুবহু মনে রাখা নয়। বরং বার্তার মূল বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মনে রাখাই ‘স্মরণ’।
আমাদের স্মরণশক্তি যেকোনো বার্তা স্বল্প অথবা দীর্ঘ মেয়াদে স্মরণ রাখে। মোবাইল নাম্বার বা ঠিকানার মত জটিল তথ্যবিশিষ্ট বার্তাগুলো আমরা স্বল্প সময়ের জন্য মনে রাখতে পারি। অপরদিকে, নাম, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা ছোটবেলায় মুখস্থ করা ছড়া-কবিতাগুলো দীর্ঘদিন আমাদের স্মরণে থাকে।
শ্রবণের সময় যেকোনো বার্তা স্মরণ রাখার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। একটি বার্তার সকল অংশ আমাদের মনে না-ও থাকতে পারে। বার্তার তাৎপর্যহীন অংশগুলো আমরা স্বল্প সময়েই ভুলে যেতে পারি। কিন্তু, বার্তার মূল বা গুরুত্বপূর্ণ অংশটি আমাদের দীর্ঘকাল স্মরণ রাখতে হবে।
বার্তা দীর্ঘ মেয়াদে স্মরণ রাখার কৌশল হচ্ছে মূল বিষয়ে মনোনিবেশ করা এবং বার্তার মোড় ঘুরিয়ে দেয় এমন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা। তথ্যকে বিভিন্ন শ্রেণি বা ভাগে বিভক্ত এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে ইতোমধ্যে জানা তথ্যগুলোর সাথে নতুন তথ্যগুলো সংযুক্ত করার মাধ্যমেও বার্তা দীর্ঘ মেয়াদে স্মরণ রাখা সহজ হয়ে যায়।
মূল্যায়ন – Evaluating
শ্রবণের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হচ্ছে মূল্যায়ন। এই পর্যায়ে বক্তার ব্যক্তিত্ব, মানসিকতা ইত্যাদি দ্বারা বক্তব্যের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ও অর্থকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। যথাযথ মূল্যায়নের জন্য বক্তা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা থাকা জরুরি।
বক্তা পূর্বপরিচিত হলে আমরা তার সম্পর্কে আগে থেকে জানি এবং বার্তার যথাযথ মূল্যায়ন সহজেই সম্ভব হয়। তবে, অপরিচিত বক্তা এবং তার দেয়া বার্তা মূল্যায়ন করা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে, বক্তাকে তার বার্তার উদ্দেশ্য ও দৃষ্টিকোণ স্পষ্টভাবে উপস্থাপনের সুযোগ দিতে হবে।
বক্তা পরিচিত কিংবা অপরিচিত, যেমনি হোক না কেন, যথাযথ মূল্যায়নের স্বার্থে বার্তার মূল তথ্য, প্রাসঙ্গিক তথ্য এবং মতামতকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনে বক্তাকে প্রশ্ন করে বিষয়গুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট নেয়া যেতে পারে।
আমরা প্রায়ই কেবল বার্তা দিয়ে সকল কিছু বিচার করে বসি। এতে বক্তব্যের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। ফলে ভুল প্রতিক্রিয়া জানাই। তাই, বক্তা এবং তার দেয়া বার্তাটি কতটা যৌক্তিক বা বাস্তবিক ইত্যাদি সুচিন্তিতভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
প্রতিক্রিয়া – Responding
শ্রবণ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত ধাপ হচ্ছে প্রতিক্রিয়া জানানো। একে ‘ফলার্তন’ও বলা হয়। বক্তার প্রেরিত বার্তার প্রেক্ষিতে শ্রোতা বা প্রাপক যখন সাড়া প্রদান করে, তাই প্রতিক্রিয়া বা ফলাবর্তন। বাচনিক কিংবা অবাচনিক পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া জানানো যেতে পারে।
বক্তা বার্তা প্রেরণ তথা কথা বলার সময় শ্রোতা হিসেবে আমরা মাথা নেড়ে, হাত উঁচিয়ে কিংবা অন্যান্য অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি বা সংকেতের মাধ্যমে যে প্রতিক্রিয়া জানাই, সেগুলো অবাচনিক প্রতিক্রিয়া। এগুলো বক্তাকে ভাবায় যে আমরা তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি। এতে বক্তা বার্তা প্রদানে আরও আগ্রহী হয়ে উঠে।
বক্তার বক্তব্য শেষে আমরা যখন বার্তা সম্পর্কে আমদের নিজস্ব মতামত বক্তার কাছে সবিস্তরে তুলে ধরি, তখন আমরা বাচনিক প্রতিক্রিয়া জানাই। কার্যকর শ্রবণের জন্য বাচনিক ও অবাচনিক, উভয় ধরণের প্রতিক্রিয়া জানানোই গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখিত পাঁচটি ধাপ স্বতন্ত্র এবং বিস্তৃত হলেও শ্রবণের সময় আমাদের মস্তিষ্ক খুব দ্রুতই ক্রমানুসারে ধাপগুলো সম্পাদন করে ফেলে। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় আমরা তা বুঝতে পারি না। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই আমরা শ্রবণের সময় প্রতিটি ধাপ আলাদা ভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হবো।
তথ্যসূত্র - References
- 1উদ্ধৃতি: “To pay attention to sound, To hear something with thoughtful attention: give consideration, To be alert to catch an expected sound”; অভিধান: Merriam-Webster.com; প্রকাশনী: Merriam-Webster, Inc.;
- 2উদ্ধৃতি: “Listening is an active process of receiving aural stimuli. Contrary to popular conception, listening is an active than a passive process. Listening doesn’t just happen; we must make it happen. Listening takes energy and a commitment to engage in often difficult labor. Listening involves receiving stimuli and is thus distinguished from hearing as a physiological process. The word receiving is used here to imply that stimuli are taken in by the listener and are in some way processed or utilized. For at least some amount of time, the signals received are retrained by the listener. Listening involves aural stimuli, that is, signals (sound waves) received by the ear. Listening therefore is not limited to verbal signals but encompreasses all signals sent by means of fluctuations in air – noises as well as words, music as well as prose.”; অভিধান: The Communication Handbook: A Dictionary; লেখক: Joseph A. Devito; প্রকাশনী: Harper & Row, New York; প্রকাশকাল: ১৯৮৬;
- 3উদ্ধৃতি: “Active listening is a process of sending back to the speaker what you as a listener think the speaker meant – both in terms of content and in terms of feelings, active listening takes into consideration both verbal and nonverbal signals, active listening is not a process of merely repeating back to the speaker the exact words, but rather one of putting together in some meaningful whole the listener’s understanding of the speaker’s total message – the verbal and the nonverbal, the content and the feelings.”; অভিধান: লেখক: Joseph A. Devito; প্রকাশনী: Harper & Row, New York; প্রকাশকাল: ১৯৮৬;
- 4উদ্ধৃতি: “Listening is the active process of receiving and responding to spoken (and sometimes unspoken) messages. Listening is not just hearing what the other party in the conversation has to say.”; নিবন্ধ: The Definition of Listening and How to Do It Well; লেখক: Richard Nordquist; প্রকাশনী: ThoughtCo.com; প্রকাশকাল: ২০২০;
- 5উদ্ধৃতি: “Listening means taking a vigorous, human interest in what is being told us. You can listen like a blank wall or like a splendid auditorium where every sound comes back fuller and richer.”; লেখক: Alice Duer Miller;
- 6গ্রন্থ: The Essential of Human Communication; লেখক: Joseph A. Devito; প্রকাশনী: Pearson Publication; প্রকাশকাল: ১৯৯৩;