শরীরের মতো আমাদের মনেরও স্বাস্থ্য রয়েছে। শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য – উভয়ই আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যে সমান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শারিরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমরা সুষম খাবার খাই, ব্যায়াম করি। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় আমরা তেমন কিছুই করি না!
ফলে, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রায় সময়ই শরীর থেকে খানিকটা বিচ্ছিন্ন থাকে। শারিরিকভাবে সুস্থ ও সবল থাকা সত্ত্বেও মন ভালো না থাকার কারণে আমরা কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারি না। কিন্তু, মন প্রফুল্ল থাকা অবস্থায় শরীর যদি অসুস্থও থাকে, তখনো আমরা দৈনন্দিন কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারি।
এমনটি কেন হয়? কারণ, মন শরীরের চালিকা শক্তি। দৃঢ় মনোবল অসুস্থ শরীরেও শক্তি সঞ্চার করে, সুস্থ শরীরকে দেয় অদম্য কর্মক্ষমতা। আসলে শরীরের সাথে মন নিবিড়ভাবে জড়িত। তাই, মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা ও সুরক্ষায় আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্য – Mental Health
আমাদের অনেকেই শারিরিক স্বাস্থ্যের প্রতি যথেষ্ট যত্নবান হলেও মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দেন না। অনেকে শারিরিক স্বাস্থ্যকেই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য ভাবেন। আসলে শরীর এবং মনের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক থাকলেও শারিরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের স্বাস্থ্যের স্বতন্ত্র দু’টি অংশ।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা, বিষয়গুলো বুঝতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা কি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, “স্বাস্থ্য হল সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার একটি অবস্থা এবং শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়।”1 প্রকাশক/সংস্থা: World Health Organization (WHO); প্রকাশকাল: ১৯৪৮; উদ্ধৃতি: “Health is a state of complete physical, mental, and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity.”;
অর্থাৎ, কেবল সুস্থ শরীরই স্বাস্থ্য নয়। রোগব্যাধি মুক্ত সুস্থ শরীর, দুশ্চিন্তা-হতাশা মুক্ত সুস্থ মন এবং সুরক্ষিত-কল্যাণকামী সমাজ – এই তিনটি উপাদান মিলে আমাদের স্বাস্থ্য গঠিত হয়। আর স্বাস্থ্যের অন্যতম উপাদান এই মানসিক স্বাস্থ্য গঠিত হয় ব্যক্তির চিন্তা ,আবেগ ও আচরণের সমন্বয়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও জনসেবা বিভাগের মতে, “আমাদের আবেগ, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা, সুরক্ষা বা কল্যাণ মিলেই আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য। এটি আমরা কিভাবে চিন্তা, অনুভব ও কাজ করি, তা প্রভাবিত করে এবং আমরা কিভাবে চাপ মোকাবেলা করি, অন্যদের সাথে সম্পর্কযুক্ত হই ও পছন্দ-অপছন্দ করি, তা নির্ধারণে সহায়তা করে।”2 প্রকাশক/সংস্থা:U.S. Department of Health & Human Services; প্রকাশকাল: ২৪ এপ্রিল, ২০২৩; উদ্ধৃতি: “Mental health includes our emotional, psychological, and social well-being. It affects how we think, feel, and act, and helps determine how we handle stress, relate to others, and make choices.”;
আমাদের প্রত্যেককেই কর্মজীবন বা ব্যক্তিগত জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এসময় আমরা মানসিক অবসাদ কিংবা বিষন্নতার শিকার হই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজগুলোও তখন ব্যাহত হয়।
তখনি মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার প্রশ্নটি সামনে আসে। সচেতনতার অভাবে আমরা সেগুলোকে শারিরিক দুর্বলতা বা অসুস্থতা ভেবে সচেতনতা দেখাই না কিংবা প্রচলিত নানা কুসংস্কারের প্রভাবে সেসবকে গুরুত্ব দেই না। এতে আমাদের আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ওতপ্রোত ভাবে জড়িত থাকায় দীর্ঘদিন মানসিক স্বাস্থ্য অসুস্থ থাকলে তা শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর ভীষণ বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। শরীর ও মনের এই অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের জন্যই আমরা অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হই, একই সাথে শারিরিকভাবেও দুর্বল বোধ করি।
তাই, আমাদের শরীর সুস্থ আছে, শারিরিক কোনো অসুস্থতা নেই মানেই আমরা পরিপুর্ণভাবে সুস্থ, তেমনটি ভাবার সুযোগ নেই। সুস্থতা মানে হলো শরীরের পাশাপাশি আমাদের মন-ও সুস্থ এবং প্রফুল্ল আছে এবং আমরা সামাজিক সম্পর্কগুলোও সুস্থভাবে পরিচর্যা করে যেতে পারছি। তাহলেই আমরা বলতে পারি, আমরা সম্পুর্ণভাবে সুস্থ আছি।
মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব
সুস্থ, সুন্দর এবং সমৃদ্ধ জীবনযাপনের জন্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ এবং সুরক্ষিত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ থাকলে, আমরা –
- দৈনন্দিন কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারি;
- ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনে প্রোডাক্টিভ হয়ে উঠি;
- মেধা এবং দক্ষতার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারি;
- উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি;
- বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় দক্ষতার পরিচয় দেই;
- পারিবারিক এবং সামাজিক সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করতে পারি;
- নিজের এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি;
দৈনন্দিন জীবনে আমরা যত কাজই করি বা চিন্তা করি না কেন, তার সব কিছুরই কেন্দ্রবৃন্দতে থাকে আমাদের মন। মন সুস্থ থাকলে আমাদের মস্তিষ্ক সৃজনশীল চিন্তা করতে পারে, শরীর স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে পারে। তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা ও সুরক্ষায় করনীয়
বর্তমানে কর্মব্যস্ত জীবনে আমাদের অনেকেরই নিশ্চিন্তে নিভৃতে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ারও ফুরসত নেই। দীর্ঘদিন এমন মানসিক চাপ কিংবা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে পারে।
তাই, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরই নিতে হবে। মন যেন সুস্থ থাকে, সেদিকে সর্বদা সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে। মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিন্মক্ত উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চলতে হবে –
দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম
অনেকে সপ্তাহের কর্মদিবস গুলোতে কম ঘুমান এবং সেই ঘাটতি পোষাতে বন্ধের দিনে অনেকবেলা পর্যন্ত না খেয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। এতে হিতে বিপরিত হয় এবং সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতেও যথাসময়ে ঘুম আসে না কিংবা সঠিক সময়ে জেগে উঠতে অসুবিধা হয়।
ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা ইত্যাদি মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে অন্তত ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে শরীর এবং মন দু’টোই সুস্থ থাকবে।
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস
পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস কেবল শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং মনের জন্যও উপকারী। তাই খাবারের তালিকায় বেশি করে ফলমূল এবং সবুজ শাক-সবজি রাখুন। পুষ্টিমানসম্পন্ন খাবার শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি মস্তিষ্ককেও উদ্দীপিত রাখে।
খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান, যেমন- ভিটামিন, আয়রন ইত্যাদি আমাদের মনমেজাজ পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। যেমন: ঘনঘন চা-কফি পানের অভ্যাস আমাদের খিটখিটে বা উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই এধরণের খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস নিয়ন্ত্র রাখতে হবে।
মাদক ও ধূমপান পরিহার
অনেকেই উদ্বেগ, বিষণ্ণতা কাটাতে মাদক ও ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়েন। এগুলো সাময়িক স্বস্তি দিলেও বাস্তবে উদ্বেগ কিংবা বিষণ্ণতা কাটাতে মোটেও কার্যকর না। বরং দীর্ঘদিন গ্রহণের ফলে এসবের প্রতি আসক্তি জন্মায় এবং এগুলো গ্রহণের জন্য সার্বক্ষণিক উদ্বিগ্নতা দেখা দেয়।
মাদক ও ধূমপানে আসক্তির কারণে স্মৃতি বিভ্রাট ও মনোযোগের অভাব দেখা দেয়, মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও হ্রাস পায়। তাছাড়া, চোখের সমস্যা, খাওয়ায় অরুচি, শারিরিক দুর্বলতা এবং ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগেও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই, মানসিক সুস্থতায় মাদক ও ধূমপান অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুলা
শরীরচর্চা এবং খেলাধুলা আমাদের দেহ ও মন, উভয়কেই চাঙা রাখতে সাহায্য করে। শরীরচর্চার ফলে আমাদের কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। খেলাধুলা আমাদের উদ্বেগ, চাপ, ও অলসতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং খেলাধুলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
মিশুক ও সক্রিয় হওয়া
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও প্রতিবেশী সহ পরিচিত সকলের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতিগুলো তাদের জানান এবং তাদের গুলোও জানতে চেষ্টা করুন। এতে সুন্দর কিছু মুহূর্তের সৃষ্টি হয় এবং আমাদের মন উৎফুল্ল থাকে।
নতুন কোনো স্থানে গেলে আমরা অনেকেই একাকীত্বকে বেঁছে নেই, যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু অপরিচিত মানুষদের সাথে মিশলে, তাদের সম্পর্কে জানলে এবং সেখানকার বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে একাকীত্ব কেটে যায়।
সাহায্যের আদান-প্রদান
ছোটবেলা আমরা সকলেই পড়েছি “মানুষ সামাজিক জীব।” কিন্তু বয়সের সাথে সাথে কর্মব্যস্ততায় আমরা প্রায়ই সমাজ-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। নিকটাত্মীয়, বাল্যবন্ধু কিংবা প্রতিবেশী কারো সাথেই নিয়মিত যোগাযোগ থাকে না। ফলে তাদের সাথে হৃদ্যতার সেই সম্পর্কও থাকে না।
এধরণের পরিস্থিতি আমাদের একাকীত্বের দিকে ঠেলে দেয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই, তাদের সাথে সাহায্য-সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের বিপদে-আপদে পাশে থাকুন। এতে আপনি আনন্দ বোধ করবেন। তারাও আপনার দুঃসময়ে মানসিক শক্তি জোগাবে, সাহায্যের হাত বাড়াবে।
ভালো লাগার কাজগুলো করা
দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততা এবং নানাবিধ দায়িত্ব সামলিয়ে আমরা প্রায়ই আমাদের নিজেদের জন্য আর সময় বের করতে পারি না। বছরের পর বছর ধরে আমাদের জীবন এভাবেই চলতে থাকে। ছুটির দিনগুলো তখন যান্ত্রিক গোলযোগে ক্ষণিকের স্থবিরতা নেমে আসার মত হয়ে ওঠে, নানান উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং মানসিক চাপে দিনগুলো উপভোগ করা হয় না।
আবার, অনেকে লোকে কি বলবে, সে সব ভেবে নিজেকে দমিয়ে রাখে। ক্রমাগত এসব মানসিক চাপ আমাদের বিষণ্ণ করে দেয়, আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিপন্ন হয়। তাই, দৈনিক কিছু সময় নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করতে হবে। হতে পারে তা ঘুরতে যাওয়া কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, আপনার যা ভালো লাগে, তা-ই করুন।
দুশ্চিন্তা ও চাপমুক্ত থাকা
প্রত্যেকের জীবনেই অসংখ্য দায়িত্ব থাকে। তাই বলে এসব নিয়ে দুশ্চিন্তা বা চাপগ্রস্থ হওয়া যাবে না। বরং দুশ্চিন্তা দায়িত্ব পালনের স্বাভাবিক সক্ষমতাকেও বাধাগ্রস্থ করে, মানসিক চাপ বাড়িয়ে দেয়।
দুশ্চিন্তা ত্যাগ করে আপনার দায়িত্বগুলোর তালিকা করুন, গুরুত্বানুসারে সেসব দায়িত্বগুলো ভাগ করুন। অধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো প্রথমে সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। সেসব দায়িত্ব কিভাবে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা যায়, তা নিয়ে ভাবুন, পরিকল্পনা করুন। এতে অনেকটাই চাপমুক্ত থাকতে পারবেন।
সুশৃঙ্খল জীবনযাপন
মানসিক এবং শারিরিক সুস্থতায় শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের কোনো বিকল্প নেই। ঘুম, খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা সহ এতক্ষণ মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা ও সুরক্ষায় যেসব উপায়ের কথা বলে হয়েছে, এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নেও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবন যাপন আবশ্যক।
তাই, আজই আপনার দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজকর্মের একটি রুটিন করে ফেলুন। সকালে জেগে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত পড়া, কাজ, খাওয়া, বিনোদন, শরীরচর্চা ইত্যাদি প্রতিটি কাজের জন্য সময় নির্ধারণ করুন এবং দৃঢ়ভাবে সেই সময়সূচী মেনে চলুন।
প্রকৃতির সান্নিধ্য
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং মহামারির মত ব্যাপকহারে বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং যান্ত্রিক আসক্তি। এলগরিদমের মারপ্যাঁচে আমরা নিজেদের অজান্তেই এমন সব কিছু অর্জনে উদগ্রীব হয়ে উঠছি, যেগুলোর আসলে ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তাও আমাদের জীবনে নেই।
নিত্যনতুন ট্রেণ্ড আর পণ্যের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে আমাদের চাহিদা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে, যা আমাদের মানসিক স্বস্তি বা শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। অন্যদিকে সেসব না পেলে আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি, হীনমন্যতায় ভুগছি। ফলে পাওয়া কিংবা না পাওয়া, সব কিছুই আমাদের বিষণ্ণ করে তুলছে।
বাস্তবতার নিরিখে এসব প্রযুক্তি থেকে একদম বিচ্ছিন্ন থাকা অসম্ভব। তাই, দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য হলেও সকল ধরণের যান্ত্রিকতা এবং প্রযুক্তি থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ দূরে রাখুন। ছুটির দিনগুলোতে প্রকৃতির সান্নিধ্যে চলে যান। প্রকৃতিতে পাওয়া প্রশান্তি মানসিক স্বাস্থ্যের মহৌষধ।
পরিশেষে, শরীরকে আমরা যেভাবে যত্ন করি, মনের প্রতিও সেরকম যত্নবান হওয়া জরুরি। শরীরের কোন ধরণের অসুখে আমরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে দ্বিধাবোধ করি না। অথচ, মানসিক স্বাস্থ্যকে আমরা প্রায়ই অবহেলা করি। এমনটি করা মোটেই উচিত নয়।
আমাদের স্বাস্থ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, উপরিউক্ত উপায়গুলো মেনে চলুন। পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে মনোবিদের দ্বারস্থ হোন এবং তাদের সাহায্য নিন।
তথ্যসূত্র - References
- 1প্রকাশক/সংস্থা: World Health Organization (WHO); প্রকাশকাল: ১৯৪৮; উদ্ধৃতি: “Health is a state of complete physical, mental, and social well-being and not merely the absence of disease or infirmity.”;
- 2প্রকাশক/সংস্থা:U.S. Department of Health & Human Services; প্রকাশকাল: ২৪ এপ্রিল, ২০২৩; উদ্ধৃতি: “Mental health includes our emotional, psychological, and social well-being. It affects how we think, feel, and act, and helps determine how we handle stress, relate to others, and make choices.”;