Learnera Academy Logo
Search
Close this search box.

ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

ফিচার ইমেজ: ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো
ফিচার ইমেজ: ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

সূচিপত্র

বর্তমান পৃথিবীতে খেলাধূলা মানুষের বিনোদনের এক প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর গণমানুষের কাছে খেলাধূলাকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উপভোগ্য করে উপস্থাপন করে চলেছে ক্রীড়া সাংবাদিকগণ। অর্থাৎ খেলাধূলা এবং খেলাধূলা প্রেমীদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে চলেছে ক্রীড়া সাংবাদিকগণ। এই সেতুবন্ধনের কাজকেই বলা হয় ক্রীড়া সাংবাদিকতা।

ক্রীড়া সাংবাদিকতা 

ক্রীড়া সাংবাদিকতা হলো সাংবাদিকতার সেই ধারা, যেখানে মূলত বিভিন্ন খেলাধূলা এবং প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন, খবর এবং আধেয় তৈরি করা হয়। অর্থাৎ, খেলাধূলাকে কেন্দ্র করে যে সাংবাদিকতার বিচরণ সাধারণত তাকেই ক্রীড়া সাংবাদিকতা বলা হয়।

শেফিল্ড হালাম ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের জেষ্ঠ্য প্রভাষক ফিল অ্যান্ড্রুসের মতে, “ক্রীড়া সাংবাদিকতা হলো সাংবাদিকতার এমন একটি ধারা যেখানে ক্রীড়া, প্রতিযোগিতা এবং খেলোয়াড় সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।”1উদ্ধৃতি: “Sports journalism is a genre of journalism that reports on events related to sports, competitions and athletes” গ্রন্থ: Sports Journalism, A Practical Introduction, লেখক: ফিল অ্যান্ড্রুস, প্রকাশণী: Sage Publications, প্রকাশকাল: ২০১৭

ব্রাইটন ইউনিভার্সিটির ক্রীড়া সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক রব স্টিনের মতে “ক্রীড়া প্রেমিদের নিকট ক্রীড়া সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছে দেওয়াই ক্রীড়া সাংবাদিকতা”2উদ্ধৃতি: “Sports journalism is the delivery of sports related information to sports fans” গ্রন্থ: Sports Journalism, A Multimedia Primer, লেখক: রব স্টিন, প্রকাশণী: Routledge, প্রকাশকাল: ২০১৪

নিউ ওয়ার্ল্ড এনসাইক্লোপিডিয়ার সংজ্ঞানুসারে, “ক্রীড়া সাংবাদিকতা হল সাংবাদিকতার এমন একটি রূপ, যা বিশেষত খেলাধুলা বিষয়ক বিভিন্ন ঘটনা এবং ফলাফলের উপর প্রতিবেদন করে থাকে।”3 উদ্ধৃতি “Sports journalism is a form of journalism that specifically reports on events and outcomes related to sports” অভিধান: New World Encyclopedia

লখনৌ ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রফেসর মুকুল শ্রীভাস্তব এর মতে, “ক্রীড়া সাংবাদিকতার প্রাথমিক উদ্দেশ্য মূলত খেলাধুলা বা তার পরিবেশ সম্পর্কে জানানো নয়, জনমানুষের সামনে বাস্তবতা উপস্থাপন করা।”4উদ্ধৃতি “Basically, the primary objective of sports journalism is not to know about the game or th e environment of the sport, but to present the reality to the public লেখক: প্রফেসর মুকুল স্রীভাসতাভা

ক্রীড়া সাংবাদিকতার গুরুত্ব

প্রথম যখন ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে আলাদা সত্ত্বা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিলো তখন এই বিভাগকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হত না। আলাদা করে বিশেষজ্ঞ সাংবাদিকও রাখা হত না। সংবাদপত্রের সে যুগে নিয়মিত ক্রীড়া সম্পর্কিত খবরও প্রকাশ হত না খুব একটা। কিন্তু বর্তমানে এই দৃশ্যপট একেবারেই ভিন্ন। 

এখন প্রতিটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে শুধু যে একাধিক ক্রীড়া সাংবাদিক থাকেন তেমনটা নয়, বরং ক্রীড়া সাংবাদিকতার জন্য চালু করা হয়েছে স্বতন্ত্র বিভাগও। বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে অন্তত একপৃষ্ঠা বরাদ্দ থাকে খেলাধুলার জন্য। প্রথম আলোর মতো পত্রিকাগুলোতে থাকে দুই পৃষ্ঠা জুড়ে খেলাধুলার সংবাদ। স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলোর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সব বিভাগের মধ্যে একটা হল ক্রীড়া বিভাগ। চালু হয়েছে ক্রীড়া সম্পর্কিত টেলিভিশন চ্যানেল, যা শুধুমাত্র খেলাধুলা বিষয়ক আধেয় নিয়ে কাজ করে। জাতীয় পত্রিকা এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশন তো বটে, ব্যবসায় সম্পর্কিত গণমাধ্যমগুলোও প্রাধান্য দিচ্ছে ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে। কারণ, সুযোগ নেই এই বিভাগকে এড়িয়ে যাওয়ার। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ফাইনানশিয়াল এক্সপ্রেসের মতো ব্যবসা সম্পর্কিত মিডিয়া হাউজ, যারা জাতীয় কোনো বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন করে না, তারাও নিয়মিত ক্রীড়া নিয়ে কাজ করে চলেছে। তৈরি করেছে খেলাধুলার জন্য আলাদা বিভাগ। 

এখন প্রশ্ন হল ক্রীড়া সাংবাদিকতার এত গুরুত্বের কারণ কী? কারণ একটাই- ‘পাবলিক ইন্টারেস্ট বা জনস্বার্থ’। খেলাধুলা পুরা বিশ্বের মানুষের আবেগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। খেলাধুলা সম্পর্কিত খবর, প্রতিবেদন, আধেয় মুখিয়ে থাকে মানুষ।

আগেকার রাজাদের শাসনামলে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্মুখ যুধ্ব হত প্রায় সময়। কিন্তু বর্তমানে আমরা সভ্য হয়েছি, সম্মুখ যুধ্বের প্রচলন নেই আর। তবে সেই সম্মুখ যুধ্বের রেশ মানুষের মন থেকে এখনও কাটে নি। এই সম্মুখ যুধ্বের কিছুটা রেশ পায় মানুষ খেলাধলার মধ্যে। কারণ, খেলাধুলা মানুষকে একটা প্রতিযোগিতা দেখার সুযোগ করে দেয় এবং খেলাধুলাকে তারা একটি যুদ্ধ হিসেবে দেখে। 

এর বেশ প্রকৃষ্ট উদাহরন হতে পারে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ সিরিজ বা ভারত বনাম পাকিস্তান, ফুটবলে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের ম্যাচ। এগুলোর একেকটা যেন খেলার মাঠের দ্বৈরথ নয়; জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ। স্বভাবত কোনো গণমাধ্যম উন্মাদনাময় এই বিভাগকে এড়িয়ে চলতে চাইবে না।

 

ক্রীড়া সাংবাদিকতার ক্ষেত্র

ক্রীড়া সাংবাদিকতার মূল কাঁচামাল খেলাধুলা। আর খেলাধুলা বা ক্রীড়া সাংবাদিকতার সবথেকে বড় ক্ষেত্র হল মাঠ বা স্টেডিয়াম। মাঠের প্রেসবক্স থেকেই রচিত হয় ক্রীড়া সম্পর্কিত সাধারণ খবর থেকে শুরু করে কালজয়ী সব উপাখ্যান। তবে ক্রীড়া সাংবাদিকতা কেবল এই প্রেসবক্স বা মাঠে আটকে সীমাবদধ্ব থাকার বস্তু নয়। এই ধারার ক্ষেত্র আরো অনেক বিস্তৃত। 

খেলাধুলার পাশাপাশি খেলোয়াড়দের যাবতীয় তথ্যও ক্রীড়া সাংবাদিকতার অন্তর্গত। সেটা হতে পারে খেলাধুলা সম্পর্কিত কিংবা পারিবারিক অথবা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনের কোনো তথ্য। এক্ষেত্রে ক্রীড়া সাংবাদিকগণের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও ‘Public Interest’ বা ‘জনস্বার্থ’ নামক উপকরণের কারণে এগুলাও সংবাদ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। বরং, দেখা যায় এসব খবরেই মানুষের আগ্রহ বেশি থাকে।

খেলাধুলা ভেদে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ক্ষেত্র আরো বিস্তৃতি লাভ করে। বর্তমানে ফ্রাঞ্চাইজি-ভিত্তিক ক্রিকেট অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশে এই ধরনের ফ্রাঞ্চাইজি-ভিত্তিক লীগ দেখা যাচ্ছে। এসব লীগে চলে নিলামের মাধ্যমে খেলোয়াড় কেনা-বেচা। এগুলোও এখন ক্রীড়া সাংবাদিকতার অন্তর্গত এক হট টপিক।

খেলাধুলা বিষয়ক এমনসব বার্তা জনগণের নিকট পৌঁছে দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন বেশকিছু সাংবাদিকও। বর্তমানে ক্রিকেট বিষয়ক সবথেকে জনপ্রিয় ক্রীড়া সাংবাদিকদের মধ্যে ভারতের হার্শা ভোগলে, আকাশ চোপড়া, ইংল্যান্ডের জর্জ ডোবেল, অস্ট্রেলিয়ার জ্যারোড কিম্বার অন্যতম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উৎপল শুভ্র, ফাহিম রহমান, আতিফ আজম, তারেক মাহমুদ, দেব চৌধুরী, মোহাম্মদ ইসামের নাম এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। 

আবার ফুটবলে এসে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ধরণই বদলে গিয়েছে। প্রতিটি দেশের আলাদা আলাদা লীগ, প্রতিটি মহাদেশের আলাদা ধরনের গঠন, এর বাইরে বৈশ্বিক আসর সহ বহু ইভেন্ট বা টুর্নামেন্ট আছে যেগুলোর দর্শক পুরো পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে চ্যাম্পিয়নস লীগ, প্রীমিয়ার লীগ, লা-লীগাসহ বিভিন্ন খেলা চলাকালে পুরো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি চর্চিত বিষয় হয়ে ওঠে এগুলোই। 

ফুটবলে ক্রীড়া সাংবাদিকতার আরো একটি ধরণ সৃষ্টি হয়েছে, যার নাম ‘ট্রান্সফার মার্কেট জার্নালিজম’৷ ফুটবল ক্লাবগুলোর মধ্যে চলমান খেলোয়াড়দের বেঁচা-কেনার খবরাখবর নিয়েই এই ধরণ সৃষ্টি হয়েছে এই ধরণের সাংবাদিকতার। মানুষের আগ্রহেরও কমতি নেই এই খেলোয়াড় বেঁচা-কেনাতে। কারণ, এখানে একইসাথে বিনোদন এবং অর্থ যুক্ত থাকে। 

ফলে পাবলিক ইন্টারেস্ট বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। বর্তমানে ‘ট্রান্সফার মার্কেট’ সম্পর্কিত সবথেকে জনপ্রিয় মুখগুলোর মধ্যে প্রধান হল ফাব্রিজিও রোমানো, ডেভিড ওরেনস্টাইন, জিয়ানলুকা ডি মারজিও, গ্যাস্তন এদুল প্রমুখ। বাংলাদেশে এতকাল ফুটবল সম্পর্কিত সাংবাদিক না থাকলেও বর্তমানে রিফাত মাসুদ, নাভিল খানেরা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। 

ক্রীড়া সাংবাদিকতা বলতে শুধু ক্রিকেট আর ফুটবলকেই বুঝায় না। এর বাইরে মানুষের সবথেকে বেশি আগ্রহ দেখা যায় টেনিসের ক্ষেত্রে। বছরজুড়ে চলা চার গ্রান্ডস্লামে খেলোয়াড়দের পাশাপাশি বেশ ব্যস্ত সময় পার করে সাংবাদিকগণ। এর বাইরে গলফ, বক্সিং, ভলিবল, বাস্কেটবল, ফরমুলা ওয়ান, দাবা, হকিসহ আরো অনেক খেলা রয়েছে যেগুলোতে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।

 

ক্রীড়া সাংবাদিকতায় চ্যালেঞ্জ

সাংবাদিকতাকে ধরা হয় একটি মহান পেশা হিসেবে। সাধারণ জনগণের কাছে দৈনন্দিনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সব খবরাখবর পৌঁছে দেওয়াই মূলত সাংবাদিকের কাজ। এটা মোটেই কোনো সহজ কাজ নয়। অনেক বাঁধা-বিপত্তি সামনে আসে। এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হয় সাংবাদিককে। ক্রীড়া সাংবাদিকতাও এসব বাঁধা বিপত্তির ব্যতিক্রম নয়।

একটা সময় মনে করা হতো ক্রিড়া সাংবাদিকতায় কোনো রিস্ক বা ভয়-ডর নেই। একসময় আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে বিদ্রুপ করে ‘টয় জার্নালিজম’ বলা হত। আমাদের দেশেও এই ধারাকে অনেকে ‘বিনোদন সাংবাদিকতা’ বলে আখ্যা দিত। 

তবে, এখন আর এই বিষয়গুলো দেখা যায় না। এখন সবাই বুঝতে পেরেছে ক্রীড়া সাংবাদিকতা কতটা বিস্তৃত, চ্যালেঞ্জিং এবং কঠিন ক্ষেত্র। সাংবাদিকতার বাকী ধারাগুলোর ন্যায় এইখানেও আশঙ্কা রয়েছে। আছে নানারকম প্রতিকূলতা আর দায়বদ্ধতা। 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখা যায় ক্রীড়া সাংবাদিকদের প্রতিবেদন, আধেয় তৈরিতে সাহায্য করে সেসব দেশের ক্রীড়া সংস্থা, অফিশিয়াল বোর্ডগুলো। এক্ষেত্রে ক্রিকেটে ইংল্যান্ড বড় একটা উদাহরণ হতে পারে। তারা প্রতিদিন মিডিয়ার সামনে কাউকে না কাউকে পাঠায় যাতে করে মিডিয়ার খবরের অভাব না পড়ে। ফুটবলে তো এগুলো খুব সাধারণ বিষয়। সাংবাদিক আর খেলোয়াড়দের সখ্যতা মাঠের গন্ডি পেরিয়ে চলে যায় ব্যক্তি জীবনে। 

তবে আমাদের দেশে এই ধরনের সংস্কৃতি এখনও গড়ে ওঠেনি। প্রায়শই দেখা যায় আমাদের সাংবাদিকেরা হয়রানির শিকার হন। কখনো খেলোয়াড়দের দ্বারা তো কখনো দায়িত্বরত পুলিশ অথবা অন্যান্য কর্মকর্তাদের দ্বারা। বিনা অপরাধে মার পর্যন্ত খাওয়ার ঘটনাও রয়েছে। 

ক্রীড়া সাংবাদিকতায় আরো একটি চ্যালেঞ্জ হলো সময় মত সবকিছু গুছিয়ে করা। সাধারণত ক্রীড়া সম্পর্কিত বিষয় বা ঘটনাগুলো অনুষ্ঠিত হয় দিনের শেষ ভাগে। প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা ঠিকমতো সময়ই পায় না প্রতিবেদন তৈরি করার। অতি অল্প সময়ে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। কারণ, পত্রিকা ছাপার একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া আছে।

টেলিভিশন, অনলাইন মিডিয়া এবং সম্প্রচার মাধ্যমের চ্যালেঞ্জ আরো জটিল। ‘তাৎক্ষণিকতা’ নামক সংবাদ উপাদানকে মূল্য দিতে গিয়ে তাদেরকে কাজ করতে হয় বিদ্যুৎ গতিতে। এর বাইরেও আরো কিছু চ্যালেঞ্জ ক্রীড়া সাংবাদিকদের মোকাবেলা করতে হয়। যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় আইন থেকে শুরু করে উপর মহলের চাপ সবই থাকে।

 

সমাজ ও রাজনীতিতে ক্রীড়া সাংবাদিকতার প্রভাব

‘যে সমাজে বিনোদন নেই, সেটা কোনো সমাজই না’। বর্তমানে বিনোদনের সর্ববৃহৎ মাধ্যম ক্রীড়া তথা খেলাধুলা। বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, যে কেউ সুযোগ পেলেই খেলাতে অংশগ্রহণ করে। আর একারণে ক্রীড়া সাংবাদিকতা সমাজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানীয় এবং আঞ্চলিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নীতি নির্ধারকদের একটা অংশে ক্রীড়া সাংবাদিকগণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এমন অনেক টুর্নামেন্ট আছে যেখানে স্কোরারের দায়িত্ব পালন করেন ক্রীড়া সাংবাদিকগণ। এভাবে সাংবাদিকতার বাইরে গিয়ে সরাসরি সামাজিক দায়িত্বে আবির্ভূত হন ক্রীড়া সাংবাদিকগণ। 

এটা যে শুধু বাংলাদেশে হয় এমনটা নয়। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নানা ইভেন্টে ক্রীড়া সাংবাদিকগণের আলাদাভাবে কদর করা হয়। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা যায়। বেজবল আমেরিকায় অনেক বেশি জনপ্রিয়। তাদের বেজবলের প্রধান টুর্নামেন্টের নাম মেজর লিগ বেজবল। 

১৯৭০ এর দশকে কতৃপক্ষ সাংবাদিকদের সরাসরি এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। তারা ক্রীড়া সাংবাদিকদের অফিসিয়াল স্কোরার হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ক্রীড়া সাংবাদিকগণ যে ডাটা সংগ্রহ করতো সেগুলোকে অফিশিয়াল রেকর্ডের মর্যাদা দেয়। এমন অসংখ্য ঘটনা আছে। 

ক্রীড়া সম্পর্কিত ইভেন্টগুলো শুধু ক্রীড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বরাবরই সামাজিক নানা দিকের সাথে জড়িয়ে গেছে। সেই উনিশ শতক থেকেই সামাজিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রভাব ফেলে চলেছে ক্রীড়া। দিয়েগো ম্যারাডোনা, মোহাম্মদ আলী, পেলে, ববি ফিশাররা বারবার ক্রীড়ার দেওয়াল টপকে পৌঁছে গেছে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। 

ক্রীড়াকে কাজে লাগিয়ে অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের সবথেকে বেশি সাহায্য করে সাংবাদিকগণ। তাদের কারণেই জনগণ জানতে পারে খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট সম্পর্কে। সিদ্ধান্ত নিতে পারে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল সে বিষয়ে। 

 

ক্রীড়া সাংবাদিকতা বনাম অন্যান্য ধারার সাংবাদিকতা

নানা রুচির মানুষের জন্য সাংবাদিকতারও বেশ কয়েকটা শাখা রয়েছে। এর মধ্যে যেমন জাতীয়, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, বিনোদন, আঞ্চলিকতা রয়েছে, তেমনই ক্রীড়া সাংবাদিকতাও রয়েছে। এই সবগুলো ধারা স্বতন্ত্র, তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। কোনটার সাথে কোনটার বৈশিষ্ট্যে সাদৃশ্য রয়েছে, আবার বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। 

ক্রীড়া সাংবাদিকতার এমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হয়েছে যেগুলো অন্য ধারাগুলোতে অনুপস্থিত। যেমন ক্রীড়া সম্পর্কিত ইভেন্টগুলে সাধারণত দিনের শেষভাগে অনুষ্ঠিত হয়। তাই ক্রীড়া সম্পর্কিত অধিকাংশ নিউজও আসে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। কিন্তু অন্য ধারাগুলোর ক্ষেত্রে সময়ের এই বিষয়টা একেবারেই ভিন্ন। 

অনেক সময় দেখা যায় হাউজগুলোর হাতে কোনো ডে ইভেন্ট নেই। এক্ষেত্রে অন্য ধারাগুলোর একটু বেগ পেতে হয়। কারণ তাদের তাজা খবর দিতেই হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ক্রীড়া সাংবাদিকতায় ফিচার স্টোরি করে খুব সহজে পাঠক বা দর্শক-শ্রোতাদের পরিতৃপ্ত করা সম্ভব হয়। 

অধিকাংশ ধারাতে কেবল খবর এবং সাদামাটা বিশ্লেষণ হলেই চলে। কিন্তু ক্রীড়া সাংবাদিকতায় আজকাল তথ্য বিশ্লেষণ আবশ্যিক। কারণ, আধুনিক এই যুগে এসে খেলাধুলা নিয়ে অনেক বেশি ঘাঁটাঘাটি হয়। 

এখন খেলার আগে ক্রীড়া সাংবাদিকগণকে মাঠে ঘটতে চলা নানা কৌশল ব্যাখ্যা করতে হয়। এই কারণে শুধু সংবাদ জ্ঞান থাকলেই হচ্ছে না, ক্রীড়া সাংবাদিকতায় নিয়োগের ক্ষেত্রে গণিত এবং পরিসংখ্যানে পারদর্শীতাও দেখা হচ্ছে, যা অন্য ধারাগুলোতে অত বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।

তথ্যসূত্র - References

  • 1
    উদ্ধৃতি: “Sports journalism is a genre of journalism that reports on events related to sports, competitions and athletes” গ্রন্থ: Sports Journalism, A Practical Introduction, লেখক: ফিল অ্যান্ড্রুস, প্রকাশণী: Sage Publications, প্রকাশকাল: ২০১৭
  • 2
    উদ্ধৃতি: “Sports journalism is the delivery of sports related information to sports fans” গ্রন্থ: Sports Journalism, A Multimedia Primer, লেখক: রব স্টিন, প্রকাশণী: Routledge, প্রকাশকাল: ২০১৪
  • 3
    উদ্ধৃতি “Sports journalism is a form of journalism that specifically reports on events and outcomes related to sports” অভিধান: New World Encyclopedia
  • 4
    উদ্ধৃতি “Basically, the primary objective of sports journalism is not to know about the game or th e environment of the sport, but to present the reality to the public লেখক: প্রফেসর মুকুল স্রীভাসতাভা
নিবন্ধটি প্রচার করুন:

⚠️ Copying, Republishing, or Using any content outside of our website (learneraacademy.com), whether for personal, commercial, or educational purpose, is extremely prohibited without prior permission of Learnera Academy. You may share the direct link of pages on social media and through email or other digital media.

This article is written in the Bengali language. References from various sources are mentioned in the reference section (তথ্যসূত্র). Media files are credited in the caption section. If you have any concerns, please get in touch with us at contact@learneraacademy.com

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে
আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

Join As A Content Writer - Learnera Academy
Join As A Content Writer - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ

হলুদ সাংবাদিকতা: কমিকের পাতা থেকে উঠে আসা সাংবাদিকতার অসুস্থ ধারা

ধরুন, একটি সংবাদমাধ্যমে একটি চাঞ্চল্যকর শিরোনাম প্রকাশিত হয়েছে যা হলো: “বিখ্যাত অভিনেত্রীর গোপন বিবাহ!” শিরোনামটি পাঠকদের মনে কৌতূহল জাগায় এবং সংবাদ পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি করে।

ফিচার ইমেজ: বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

২০০৯ সালের ২৯ মার্চ নবম জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ‘তথ্য অধিকার আইন বিল ২০০৯’ পাস হয়। ৫ এপ্রিল সেই বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে ৬ এপ্রিল আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

ফিচার ইমেজ: শ্রবণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

শ্রবণ প্রক্রিয়া: প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রবণ একটি প্রক্রিয়া এবং বাচনিক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ধরণের যোগাযোগেই শ্রবণের প্রয়োজন হয়। কার্যকর শ্রবণ ব্যতিত যোগাযোগ কখনোই ফলপ্রসূ হয় না।

ফিচার ইমেজ: আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

সহপাঠীদের মধ্যকার সাধারণ সম্পর্কের বাহিরে দুয়েকজন সহপাঠীর সাথে আপনার এই যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে তাই আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বা Interpersonal Relations।

ফিচার ইমেজ: কেস স্টাডি, অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

কেস স্টাডি: অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং কারণ উদ্ঘাটনের প্রয়োজন হলে গবেষকগণ কেস স্টাডি করেন, যেখানে দু’য়েকটি ঘটনার খুঁটিনাটি জেনে বৃহৎ কোনো ঘটনা সামগ্রিকভাবে জানার চেষ্টা করা হয়।

ফিচার ইমেজ: গণমাধ্যম গবেষণায় আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি

আধেয় বিশ্লেষণ: গণমাধ্যম গবেষণায় অত্যাবশ্যকীয় পদ্ধতি

১৯৭১ থেকে ১৯৯৫ সালে সাংবাদিকতা বিষয়ক জার্নালসমূহে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রায় ২৫% ছিল আধেয় বিশ্লেষণ-ভিত্তিক, যা ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মাঝে সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষণার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে ওঠে।

ফিচার ইমেজ: গবেষণা নকশা প্রণয়ন

গবেষণা নকশা: পরিপূর্ণ গবেষণার রূপরেখা প্রণয়ন

যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে নকশা বা পরিকল্পনা প্রণয়ন। গবেষণাও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং, নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে সূচনাতেই গবেষণার সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ফিচার ইমেজ: বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাসমূহ

বাংলায় ফ্যাক্ট চেক: বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাসমূহ

বাংলাদেশে স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার পাশপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি গণমাধ্যম ফ্যাক্ট চেকিং নিয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক (IFCN) স্বীকৃত এবং নির্ভরযোগ্য এমন কিছু ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান হচ্ছে

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত
আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Request For Article - Learnera Academy
Request For Article - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Scroll to Top
Learnera Academy Logo