বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যান। এসব শিক্ষার্থীদের অনেকে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরলেও অধিকাংশই বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন।
পত্রপত্রিকা এবং সরকারি নথিপত্র থেকে প্রতিবছর কতজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে যাচ্ছেন, সেই সংখ্যা সহজেই জানা সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি শিক্ষার্থীদের দেশে ফেরা কিংবা না ফেরার প্রবণতা এবং কারণ নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী হন, আপনাকে সেসব শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিতে হবে।
এক্ষেত্রে মাত্র একটি গবেষণার জন্য হাজার কিংবা লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নেয়া একজন গবেষকের জন্য একদিকে প্রচুর সময়সাপেক্ষ, অন্যদিকে প্রচণ্ড ব্যয়বহুল। তাছাড়া, বাস্তবতার নিরিখে এমনটা অসম্ভব।
এজন্য, বিশাল জনগোষ্ঠী বা সমগ্রক নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে সেই জনসংখ্যা বা সমগ্রকের কিছু অংশ নির্বাচন করে তা থেকে গবেষণার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। গবেষণার সুবিধার্থে বাছাইকৃত প্রতিটি অংশ হচ্ছে নমুনা (Sample) আর সমগ্রকের অংশবিশেষ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াটি নমুনায়ন (Sampling)।
নমুনা ও নমুনায়ন – Sample and Sampling
নমুনা একটি বিস্তৃত সমগ্রকের প্রতিরূপ, যা সমগ্রকের বৈশিষ্ট্যের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থাৎ, নমুনা হচ্ছে ঐ ক্ষুদ্রতর অংশ যা বৃহত্তর অংশ সম্পর্কে জানার জন্য বৃহত্তর অংশ হতেই বাছাই করা হয়।
সমাজ বিজ্ঞানী নান লিন তার “Foundations of Social Research” গ্রন্থে লিখেছেন, “জনগোষ্ঠী বা সমগ্রক থেকে তার প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি নির্বাচিত অংশ-ই হচ্ছে নমুনা।” 1গ্রন্থ: Foundations of Social Research; সংস্করণ: ১ম; পৃষ্ঠা: ১৪৬; লেখক: Nan Lin; প্রকাশক: McGraw-Hill, Inc; প্রকাশকাল: ১৯৭৬; উদ্ধৃতি: “A subset of cases from the population chosen to represent it is called a sample.
একটি নমুনায় সমগ্রকের সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান না-ও থাকতে পারে। এই শঙ্কায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সমগ্রকের সকল বৈশিষ্ট্যের প্রতীক হিসেবে বেশ কিছু নমুনা নির্বাচন করা হয়। স্বীকৃত পদ্ধতি মেনে একাধিক নমুনা নির্বাচনের এই পুরো প্রক্রিয়াটিই হচ্ছে নমুনায়ন।
নমুনায়নের মাধ্যমে সমগ্রকের নির্বাচিত অংশ বা স্বল্প সংখ্যক বিষয়ে অনুসন্ধান সীমিত রেখে সম্পূর্ণ সমগ্রক বা ব্যাপক বিস্তৃত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়।
গবেষক জেমস ব্ল্যাক এবং ডিন চ্যাম্পিয়ন এর ভাষ্যমতে, “বৃহত্তর সমগ্রক থেকে গৃহীত তার কিছু উপাদান বা অংশকে বলা হয় নমুনা। বৃহত্তর সমগ্রক বা জনগোষ্ঠী থেকে সেই উপাদান বা অংশগুলো গ্রহণের প্রক্রিয়াকে বলা নমুনায়ন।”2গ্রন্থ: Methods and Issues in Social Research; সংস্করণ: ১ম; পৃষ্ঠা: ২৬৫; লেখক: James A. Black, Dean J. Champion; প্রকাশক: John Wiley & Sons, Inc; প্রকাশকাল: ১৯৭৬; উদ্ধৃতি: “A portion of elements taken from the larger population of them is called a sample. The process of drawing those elements from the larger population or universe is called sampling.
উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আরেকটু স্পষ্ট করা যাক – একজন ডাক্তার রক্ত পরীক্ষার জন্য রোগীর শরীর হতে কয়েক ফোঁটা রক্ত সংগ্রহ করেন। কারণ কয়েক ফোঁটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই রোগীর সমস্ত রক্ত বা শরীর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এই কয়েক ফোঁটা রক্ত হল নমুনা এবং যে প্রক্রিয়ায় রোগীর শরীর হতে এই রক্ত সংগ্রহ করা হলো, তা হচ্ছে নমুনায়ন।
বর্তমানে সামাজিক গবেষণায়, বিশেষত নির্বাচন ও রাজনৈতিক গবেষণায় নমুনায়ন পদ্ধতির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। নির্বাচনের ফলাফল আগাম ধারণা কিংবা রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের জনপ্রিয়তা পরিমাপে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নমুনায়ন পদ্ধতিতে গবেষণা করা হয়।
তাছাড়া, নমুনায়নের মাধ্যমে কম সময় ও খরচে এবং সহজে গবেষণা সম্পাদন সম্ভব। সমগ্রকের পরিবর্তে প্রতিনিধিত্বশীল কিছু নমুনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও উপস্থাপন করা যায়।
নমুনার আকার – Size of Sample
গবেষণার জন্য নমুনা আকার কেমন হবে বা কত সংখ্যক নমুনা নির্বাচন করতে হবে, তা নির্দিষ্ট নয়। বিষয়বস্তু, সমগ্রক এবং প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ নমুনা নির্বাচন করা গবেষকের একান্ত দায়িত্ব।
নমুনার আকার যাতে অবশ্যই সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বমূলক হয়, গবেষককে অবশ্যই তা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফলাফল পেতে বৃহৎ আকার বা বেশি সংখ্যক নমুনা নির্বাচনের বিকল্প নেই।
সাধারণত যেকোনো ধরণের গবেষণায় কমপক্ষে ১০০ নমুনা নির্বাচনের পরামর্শ দেয়া। বিষয়বস্তুভেদে নমুনার সংখ্যা এরচেয়ে কম-বেশি হলেও গ্রহণযোগ্য। যেমন, শিক্ষাক্ষেত্রে বর্ণনামূলক গবেষণায় ন্যূনতম ১০০ জন নমুনা নির্বাচনের নির্দেশনা থাকলেও পরীক্ষামূলক গবেষণায় মাত্র ৩০ জন নমুনা নির্বাচন করলেই হয়।3গ্রন্থ: শিক্ষা গবেষণা; সংস্করণ: ১ম; পৃষ্ঠা: ৭১; লেখক: মনিরা হোসেন; প্রকাশক: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়; প্রকাশকাল: ২০০০;
তবে, সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া এবং গবেষণার ফলাফলকে গ্রহণযোগ্য করতে গবেষকের উচিত নির্ধারিত সময় ও প্রাপ্ত সুবিধার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নমুনা নির্বাচন করা।
নমুনায়নের সুবিধা – Advantage of Sampling
গবেষণার তথ্য সংগ্রহে অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে নমুনায়ন অধিকতর সুবিধাজনক পদ্ধতি। নমুনায়নের উল্লেখযোগ্য সুবিধাসমূহ হলাে:
সাশ্রয়ী
সময়, শ্রম এবং অর্থ – সকল দিক থেকেই নমুনায়ন তুলনামূলক সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সমগ্র সমগ্রকের পরিবর্তে তার প্রতিনিধিত্বশীল স্বল্প কিছু নমুনা নিয়ে গবেষণা হয় বলে কম সময় ও শ্রম প্রয়োজন হয়। জরিপ, গবেষণা সহকারী ইত্যাদির প্রয়োজন না হলে অনুসন্ধান পরিচালনায়ও তেমন খরচ হয় না।
নির্ভরযোগ্যতা
নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় নমুনাগুলো গবেষক নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। নির্দিষ্ট নমুনা থেকে যথাযথ বৈজ্ঞানিক ও স্বীকৃত পদ্ধতি-প্রক্রিয়া মেনে স্বল্প কিছু তথ্য সংগ্রহ করায় সেগুলো নির্ভরযোগ্য হয়।
নির্ভুলতা
নমুনায়ন পদ্ধতিতে তথ্যের কলেবর কম থাকে। সীমিত পরিসরে সংগৃহীত সঠিক তথ্য নিয়ে গবেষণা পরিচালিত হয় বিধায় তথ্য-বিভ্রাটের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। ফলে গবেষণার ফলাফল নির্ভুল হয়।
দ্রুত ফলাফল
নমুনায়নের মাধ্যমে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করা যায়। জরিপ, কেস স্টাডি এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ সময়সাপেক্ষ। কিন্তু নমুনায়নের মাধ্যমে দ্রুত তথ্য সংগ্রহের পর তাৎক্ষনিক বিশ্লেষণ এবং ফলাফল প্রদান করা যায়। এজন্যই নির্বাচনের ফলাফল আগাম ধারণা করতে নমুনায়নকে বেঁছে নেয়া হয়।
প্রশিক্ষণ
নমুনায়ন পদ্ধতিতে সীমিত পরিসরে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তাই অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক গবেষণা সহকারীর প্রয়ােজন পড়ে এবং তাদের সহজেই প্রশিক্ষণ দেয়া যায়।
নমুনায়নের অসুবিধা – Disadvantage of Sampling
নমুনায়ন বহুল প্রচলিত এবং সুবিধাজনক পদ্ধতি হওয়া সত্ত্বেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। যেমন:
নমুনা প্রাপ্তি
নমুনায়ন পদ্ধতিতে যেহেতু সমগ্র সমগ্রক নিয়ে গবেষণা করা হয় না, তাই কার্যকর এবং যথাযথ নমুনা নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ নমুনা নির্বাচন করতে না পারলে গবেষণার সঠিক ফলাফল প্রদান অসম্ভব। কিন্তু কার্যকর এবং যথাযথ নমুনা প্রাপ্তি বেশ দুরূহ একটি কাজ।
নমুনার বৈচিত্র্য
নমুনায়নের আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে নমুনায় বৈচিত্র্যের অভাব। ধরা যাক, নির্বাচনের ফলাফল কি হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা হবে। এক্ষেত্রে, অধিকাংশ সময়ই বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকদের সমগ্রক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের থেকে নমুনা নির্বাচন করা হয়। ছোট দলগুলোকে সমগ্রক হিসেবেই বিবেচনায় রাখা হয় না। সেক্ষেত্রে নমুনায় পর্যাপ্ত বৈচিত্র্যের অভাব থাকে।
পক্ষান্তরে, নমুনায় অত্যধিক বৈচিত্র্য থাকলে গবেষণার সুনির্দিষ্ট ফলাফল বা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে।
বস্তুনিষ্ঠতা
নমুনায়ন পদ্ধতিতে নমুনা কেবল নিজস্ব বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে না, সমগ্রকের প্রতিনিধিত্ব করে। বস্তুনিষ্ঠ বা নিরপেক্ষ না হলে প্রকৃতপক্ষে সেই নমুনা সমগ্রকের প্রতিনিধিত্ব করবে না। কিন্তু গবেষকের পক্ষে নমুনা এবং তার প্রদত্ত তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করা কঠিন।
গবেষকেরও নমুনা নির্বাচনে বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। কিন্তু নমুনা নির্বাচনে স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে গবেষক গবেষণার বিষয়বস্তু প্রমাণে একপাক্ষিকভাবে নমুনা নির্বাচন করলে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় থাকবে না।
দক্ষতা
নমুনায়নের জন্য উপযুক্ত নমুনা নির্বাচন, নমুনার বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই এবং তথ্যের যথাযথ বিশ্লেষণে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তির প্রয়ােজন। কিন্তু দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তির অপ্রতুলতা বরাবরই রয়েছে।
নমুনায়নের পদ্ধতি – Methods of Sampling
নমুনায়নের মাধ্যমে গবেষণা সহজতর হলেও তার আগে সমগ্রক থেকে উপযুক্ত নমুনা নির্বাচন একটি চিন্তনীয় বিষয়। বিস্তৃত সমগ্রকের কোন অংশগুলো নমুনা হিসেবে নির্বাচন করলে গবেষণার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জিত হবে, তা নিয়ে প্রায়ই জটিলতা সৃষ্টি হয়।
গবেষণার সুবিধার্থে এবং নিরপেক্ষ, নির্ভুল ও প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনাদল গঠন করতে গবেষকগণ নমুনায়নের বিভিন্ন পদ্ধতির প্রচলন করেছেন। গবেষণার উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু, তথ্যের প্রকৃতি, গবেষণার জন্য নির্ধারিত সময় ও বরাদ্দকৃত অর্থ ইত্যাদি বিবেচনায় গবেষকগণ নমুনায়নের যেকোনো একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন।
সম্ভাবনা তত্ত্বের ভিত্তিতে নমুনায়ন পদ্ধতিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১. সম্ভাবনা নমুনায়ন – Probability Sampling
২. নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন – Non-Probability Sampling
সম্ভাবনা নমুনায়ন – Probability Sampling
যে নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় সমগ্রকের প্রতিটি একক বা উপাদানের নমুনা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সমান সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকে, তাই সম্ভাবনা নমুনায়ন। এপদ্ধতিতে নমুনা নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে না, বরং যথাযথ প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনায়ন নিশ্চিত হয়।
সম্ভাবনা নমুনায়নের মাধ্যমে একজন গবেষক নমুনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং সময়ক হতে প্রাপ্ত ফলাফল – এ দু’য়ের মাঝের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারেন। পরিমাণবাচক গবেষণায় প্রায়ই এপদ্ধতিতে নমুনায়ন করা হয়ে থাকে।
সম্ভাবনা নমুনায়ন আবার চারটি পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। যেমন:
১। দৈবচয়িত নমুনায়ন – Random Sampling
২। নিয়মানুগ নমুনায়ন – Systematic Sampling
৩। স্তরিত নমুনায়ন – Stratified Sampling
৪। গুচ্ছ নমুনায়ন – Cluster Sampling
দৈবচয়িত নমুনায়ন – Random Sampling
দৈবচয়িত নমুনায়ন হচ্ছে সম্ভাবনা নমুনায়নের মৌলিক পদ্ধতি। এপদ্ধতিতে সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমান সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকে। নির্বিচারীভাবে দৈবচয়ন রীতিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নমুনা বাছাই করা হয় বলে সরল নির্বিচারী নমুনায়নকে ‘অবাধ দৈবচয়ন নমুনায়ন’ (Unrestricted Random Sampling) পদ্ধতিও বলা হয়।
দৈবচয়িত নমুনায়নে প্রধানত ‘দৈব সংখ্যা সারণি পদ্ধতি’ (Random Number Table) এবং ‘দৈব নির্বাচন পদ্ধতি’ (Lottery Method) ব্যবহৃত হয় বলে নমুনা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গবেষকের ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিংবা পক্ষপাতের কোনো সুযোগ থাকে না। সরল এবং নির্বিচারীভাবে নমুনা নির্বাচন করায় একে ‘সরল নির্বিচারী নমুনায়ন’-ও (Simple Random Sampling) বলা হয়।
তবে, এপদ্ধতিতে প্রতিনিধিত্বশীলতা নিশ্চিত করার জন্য অধিক সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। সরল নির্বিচারী নমুনায়ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বিচারী ফলাফল প্রদান করে, যা গবেষণার বিশ্লেষণ ও ফলাফল বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়ার সম্ভাবনাকে হ্রাস করে।
নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন – Systematic Sampling
সম্ভাবনা নমুনায়নের সহজতম পদ্ধতি হচ্ছে নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়ন। এই পদ্ধতিতে নমুনায়নের জন্য সমগ্রকের অন্তর্ভুক্ত এককগুলোর একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। অতঃপর সেই তালিকা থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ নমুনা নির্বাচন করা হয়।
অর্থাৎ, প্রথমে সমগ্রকের সকল উপাদানকে ক্রমানুসারে সাজাতে হবে। তারপর সেখান থেকে প্রথম নমুনাটি নির্বিচারীভাবে নির্বাচন করতে হবে। পরবর্তী সকল নমুনা প্রথম নমুনা থেকে দ্বিতীয় নমুনার ব্যবধানের সমান ব্যবধানে সংগ্রহ করতে হবে। সমান ব্যবধান নির্ধারণের উপায় হচ্ছে সমগ্রকের সংখ্যাকে কাঙ্ক্ষিত নমুনার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা।
নমুনা দ্বারা সমগ্রককে ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় নমুনা ব্যবধান (Sampling Interval)। নির্দিষ্ট ব্যবধান পর পর নমুনা বাছাই করা হয় বলে এই পদ্ধতিকে ‘ব্যবধান নমুনায়ন’ (Interval Sampling)-ও বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একটি গবেষণার সমগ্রকের সংখ্যা ১০০০ জন। এরমধ্যে ১০০ জনকে নমুনা হিসেবে নির্বাচন করা হবে। এক্ষেত্রে, সমগ্রকের পরিমাণ ১০০০-কে নমুনার পরিমাণ ১০০ দ্বারা ভাগ করলে পাওয়া যাবে ১০ (১০০০ ÷ ১০০ = ১০)। এই ১০ হচ্ছে নমুনা ব্যবধান।
এবার, প্রথম নমুনাটি দৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। তারপর নির্বাচিত প্রথম নমুনা থেকে প্রতি ১০তম নমুনা নির্বাচনের মাধ্যমে নমুনায়ন করতে হবে। যেমন – প্রথম নির্বাচিত নমুনার ক্রম যদি হয় ৫, তাহলে দ্বিতীয় নমুনাটি হবে ১৫, তৃতীয়টি হবে ২৫ এবং ক্রমানুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে সর্বশেষ নমুনাগুলো হবে ৯৭৫, ৯৮৫ এবং ৯৯৫। এভাবে নির্বাচিত ১০০ নমুনা দিয়ে নমুনায়ন সম্পন্ন করতে হবে।
স্তরিত নমুনায়ন – Stratified Sampling
যে নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের উপাদানগুলোকে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তর বা অংশে বিভক্ত করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, তাই স্তরিত নমুনায়ন। এই পদ্ধতিতে সমগ্রকের স্তর বা অংশগুলোকে উপ-সমগ্রকও বলা হয়। স্তরিত নমুনায়নের মাধ্যমে অধিকতর প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা নির্বাচন সম্ভব।
নমুনায়নের এই প্রক্রিয়ায় স্তরগুলোর পরিমাণ বা আয়তন অনুপাতে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক নমুনা নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি স্তর থেকে নমুনা নির্বাচনের পরিমাণ সাধারণত সমানুপাতিক হয়ে থাকে, তবে বিশেষ ক্ষেত্রে অসমানুপাতিকও হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার একটি এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ে সেখানকার মানুষের মতামত নিয়ে গবেষণা হবে। এক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক অবস্থানের ভিত্তিতে স্থানীয় মানুষ তথা সমগ্রককে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত – এই তিন স্তরে ভাগ করা যেতে পারে। তারপর প্রতিটি স্তর থেকে আনুপাতিক হারে নির্বিচারীভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক নমুনা বাছাই করতে হবে।
ধরা যাক, সেখানকার জনসংখ্যা তথা সমগ্রকের সংখ্যা ১৫ হাজার। তন্মধ্যে উচ্চবিত্ত ৩ হাজার, মধ্যবিত্ত ৭ হাজার এবং নিন্মবিত্ত ৫ হাজার। সেক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত নমুনার সংখ্যা ১৫০ হলে, নমুনায়নের জন্য উচ্চবিত্ত স্তর থেকে ৩০ জন, মধ্যবিত্ত থেকে ৭০ জন এবং নিন্মবিত্ত থেকে ৫০ জনকে সমানুপাতিকহারে নমুনা হিসেবে নির্বাচন করতে হবে।
গুচ্ছ নমুনায়ন – Cluster Sampling
গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতিতেও সমগ্রকে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তর বা অংশে বিভক্ত করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু স্তরিত নমুনায়নে যেখানে নমুনা হিসেবে সমগ্রকের একটি উপাদান বা একককে একটি নমুনা হিসেবে নির্বাচন করা হয়, গুচ্ছ নমুনায়নে সেখানে সমগ্রকের এক গুচ্ছ বা অংশকেই নমুনা হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে প্রথমে সমগ্রকের অনেকগুলো অংশ বা গুচ্ছ চিহ্নিত করা হয়। তারপর সেখান থেকে কিছু অংশ বা গুচ্ছকে সামগ্রিকভাবে নমুনা হিসেবে বাছাই করা হয়। সেসব অংশ বা গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত কোন উপাদান বা একককে নমুনা হিসেবে নির্বাচন করা হয় না।
উদাহরণস্বরূপ, ঢাকার একটি এলাকার পরিবর্তে সমগ্র ঢাকা জেলার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার মানুষের মতামত জানা হবে। বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ২কোটি। এলাকা এবং বাজারভেদে পণ্যের দামেও তারতম্য থাকে। তাই এত বিশাল জনগোষ্ঠী এবং সামঞ্জস্যহীন পণ্যমূল্য নিয়ে স্তরিত নমুনায়ন পদ্ধতিতে উপযুক্ত এবং প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা নির্বাচন অসম্ভব।
গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতিতে ঢাকার বেশ কিছু এলাকাকে প্রাথমিক নমুনা হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। যেমন – উচ্চবিত্তদের এলাকা হিসেবে গুলশান, বনানী, মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের আধিক্যের ভিত্তিতে মতিঝিল, আরামবাগ এবং নিন্মবিত্ত শ্রমিকদের বাসবাসের ভিত্তিতে সাভার, আশুলিয়া নমুনা গুচ্ছ হিসেবে বাছাইকৃত হবে।
অর্থাৎ, গুচ্ছ নমুনায়নে ঢাকার প্রায় অর্ধশত এলাকা থেকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ১০-টি এলাকাকে প্রাথমিক নমুনা হিসেবে বাছাই করা হবে। নির্বাচিত প্রতিটি এলাকাই একেকটি স্বতন্ত্র নমুনা হিসেবে বিবেচিত হবে। পরবর্তীতে এসব নমুনা বা এলাকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে তার ভিত্তিতেই সমগ্র ঢাকার বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
অধিকাংশ সময়ই ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে গুচ্ছ নির্বাচন করা হয় বলে গুচ্ছ নমুনায়নকে ‘ক্ষেত্র নমুনায়ন’ (Area Sampling) নামেও অভিহিত করা হয়। আর্থ-সামাজিক গবেষণায় বহুল ব্যবহৃত হলেও গুচ্ছ নমুনায়নের দুর্বলতা হচ্ছে নমুনাগুলো সমগ্রকের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করছে কিনা, তা নিশ্চিত করা দুরূহ।
নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন – Non-Probability Sampling
যে নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় সমগ্রকের আওতাভুক্ত প্রতিটি একক বা উপাদানের নমুনা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, তা-ই নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন৷ গবেষণার উদ্দেশ্য এবং প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে এধরণের নমুনা নির্বাচন করা হয়।
সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় এপদ্ধতিতে পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে। তাছাড়া, উপযুক্ত নমুনা নির্বাচন না হলে তা সমগ্রকের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করে না। ফলে সমগ্রক সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া নাও যেতে পারে।
নিঃসম্ভাবনা নমুনায়ন চারটি পদ্ধতিতে করা যায়। এগুলো হচ্ছে –
১। আকস্মিক নমুনায়ন – Accidental Sampling
২। উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন – Purposive Sampling
৩। কোটা নমুনায়ন – Quota Sampling
৪। স্নোবল নমুনায়ন – Snowball Sampling
আকস্মিক নমুনায়ন – Accidental Sampling
আকস্মিক নমুনায়ন পদ্ধতিতে গবেষক বিশেষ কোনো নিয়ম মেনে নমুনা সংগ্রহ না করে বরং তাৎক্ষণিকভাবে হাতের নাগালে যাকে পান, তাকেই নমুনা হিসেবে নির্বাচন করেন। অর্থাৎ, গবেষণার তথ্য সংগ্রহকালে নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এমন কারো দেখা পেলে তৎক্ষণাৎ তাকে নমুনার অন্তর্ভুক্ত করাই আকস্মিক নমুনায়ন।
অনুমান গঠন, মতামত জরিপ এবং সীমিত সময়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে এপদ্ধতি অধিক ব্যবহৃত হয়। ব্যস্ত সড়ক, বাজার, পথসভা ইত্যাদি জনসমাগমপূর্ণ স্থান থেকে এধরণের নমুনা বাছাই করা হয়। গবেষক তার সুবিধাজনক স্থান, সময় ও সিদ্ধান্তে এধরণের নমুনায়ন করতে পারেন বলে একে ‘সুবিধাজনক নমুনায়ন’ (Convenience Sampling)-ও বলা হয়।
যেমন, একজন গবেষক বা সাংবাদিক আগামী নির্বাচনের ফলাফল কি হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে যাকে সামনে পেলেন, তাকেই এব্যাপারে প্রশ্ন করলেন। এভাবে ১০০ জনকে নমুনা নির্বাচিত করে তাদের থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবেন। এটি আকস্মিক নমুনায়নের একটি দৃষ্টান্ত।
উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন – Purposive Sampling
উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন পদ্ধতিতে গবেষণার উদ্দেশ্যর সাথে সঙ্গতি রেখে গবেষক নিজের জ্ঞান, বিচার-বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি প্রয়োগ করে সমগ্রকের বিশেষ কিছু একককে নমুনা হিসেবে বাছাই করেন।
এপদ্ধতিতে গবেষণার উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা মূলত অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে এবং গবেষকের জ্ঞান, বিচার-বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি নমুনা নির্বাচনের মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এজন্য একে ‘বিচারমূলক নমুনায়ন’ (Judgmental Sampling)-ও বলা হয়।
উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়ন অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং সমগ্রকের প্রতিনিধিত্ব নিয়েও সন্দেহ থাকে বিধায় এপদ্ধতি বিতর্কিত। তবে গবেষক যদি অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ এবং বিচক্ষণ হন, তাহলে এপদ্ধতিতেও উপযুক্ত প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন করা সম্ভব। সমগ্রকের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে এপদ্ধতিতে নমুনায়ন করা সুবিধাজনক।
কোটা নমুনায়ন – Quota Sampling
কোটা নমুনায়নে সমগ্রকের অন্তর্ভুক্ত একক সমূহকে কয়েকটি কোটা (Quota) বা শ্রেণিতে বিভক্ত করে তা থেকে নির্বিচারীভাবে আনুপাতিক হারে নমুনা সন্ধান ও নির্বাচন করা হয়। সমগ্রকের সকল স্তর থেকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি মূলত স্তরিত নমুনায়নের একটি বিকল্প তবে দুর্বল পদ্ধতি।
গবেষণার বিষয়বস্তু ও উদ্দেশ্য এবং গবেষকের বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে কোটা বা শ্রেণিগুলো থেকে নমুনা নেয়া হয় বলে এটি অদৈবচয়িত নমুনায়ন পদ্ধতি। ফলে এতে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থাকে এবং প্রক্রিয়াটিও নির্ভরযোগ্য নয়।
কোটার ভিত্তি হিসেবে সাধারণত বয়স, লিঙ্গ, পেশা, শিক্ষা, ধর্ম ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এপদ্ধতিতে নমুনা বাছাই করতে প্রথমে কোটার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। তারপর বিভিন্ন কোটা বা শ্রেণিতে সমগ্রকের কত সংখ্যক একক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা নির্বাচন করা হয়। সবশেষে, প্রতিটি কোটা থেকে আনুপাতিক হারে নমুনা বাছাই করা হয়।
যেমন, ৬০০ জন মুসলমান, ৩০০ জন হিন্দু এবং ১০০ জন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীর সমন্বয়ে মোট ১০০০ জনের সমগ্রক থেকে ১০০ নমুনা বাছাই করা হবে। আনুপাতিক হারে ৬০ জন মুসলমান, ৩০ জন হিন্দু এবং ১০ জন বৌদ্ধ নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা।
নির্বিচারী পদ্ধতিতে নমুনা বাছাই করলে প্রতিটি ধর্মাবলম্বী তাদের সংখ্যার আনুপাতিক হারে নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এই অসুবিধা এড়াতে সমগ্রককে কতিপয় কোটায় বিভক্ত করা হয় এবং প্রতিটি কোটা থেকে আনুপাতিক হারে নমুনা বাছাই করা হয়।
স্নোবল নমুনায়ন – Snowball Sampling
স্নোবল নমুনায়ন মূলত চক্রাকার নমুনায়ন পদ্ধতি, যাতে গবেষক প্রথমে গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে নমুনা হিসেবে বাছাই করেন এবং তাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। তারপর তাদেরকে আরও কয়েকজন সম্ভাব্য নমুনার সন্ধান দিতে অনুরোধ করা হয়। পরবর্তীতে তাদের থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এভাবে যতক্ষণ না গবেষক তার গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন, তিনি ইতোমধ্যে নির্বাচিত নমুনাদেরকে নতুন নমুনা খুঁজে দিতে অনুরোধ জানাতে থাকেন। এপদ্ধতিতে এভাবে চক্রাকারে নমুনা নির্বাচন এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ চলতেই থাকে।
বিভিন্ন পর্যায়ে নমুনা নির্বাচন এবং তথ্য সংগ্রহ হয় বলে প্রথম নমুনা বা তথ্য-প্রদানকারীদের সাথে সাক্ষাৎকার এবং তাদের উত্তর পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে গবেষক আরও ভালভাবে নমুনা নির্বাচন এবং তথ্য সংগ্রহে সক্ষম হন।
তবে, প্রতিটি নমুনাদল সাধারণত সমভাবাপন্ন নমুনার সন্ধান দিয়ে থাকেন। ফলে এধরণের নমুনায়নের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যে তেমন বৈচিত্র্য থাকে না। সকল নমুনা দলের তথ্যই প্রায় একই হয়।
যেকোনো ধরণের গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি হচ্ছে নমুনায়ন। বিশাল বড় সমগ্রক থেকেও সহজে নমুনা নির্বাচন করে তা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে নমুনায়ন বেশ কার্যকর পদ্ধতি। প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নমুনায়নের সুবিধা থাকা গবেষকদের কাছেও এপদ্ধতি অনেক জনপ্রিয়।
তথ্যসূত্র - References
- 1গ্রন্থ: Foundations of Social Research; সংস্করণ: ১ম; পৃষ্ঠা: ১৪৬; লেখক: Nan Lin; প্রকাশক: McGraw-Hill, Inc; প্রকাশকাল: ১৯৭৬; উদ্ধৃতি: “A subset of cases from the population chosen to represent it is called a sample.
- 2গ্রন্থ: Methods and Issues in Social Research; সংস্করণ: ১ম; পৃষ্ঠা: ২৬৫; লেখক: James A. Black, Dean J. Champion; প্রকাশক: John Wiley & Sons, Inc; প্রকাশকাল: ১৯৭৬; উদ্ধৃতি: “A portion of elements taken from the larger population of them is called a sample. The process of drawing those elements from the larger population or universe is called sampling.
- 3গ্রন্থ: শিক্ষা গবেষণা; সংস্করণ: ১ম; পৃষ্ঠা: ৭১; লেখক: মনিরা হোসেন; প্রকাশক: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়; প্রকাশকাল: ২০০০;