Learnera Academy Logo
Search
Close this search box.

উন্নয়ন যোগাযোগ: ধারণা, বৈশিষ্ট্য, পূর্বশর্ত ও কৌশল

ফিচার ইমেজ: উন্নয়ন যোগাযোগ
ফিচার ইমেজ: উন্নয়ন যোগাযোগ

সূচিপত্র

মানব সভ্যতার উদ্ভব ও উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে যোগাযোগ। আমরা কিছু জানতে ও জানাতে যোগাযোগ করি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনে যোগাযোগের মাধ্যমে অন্যদের প্রভাবিত করি, অন্যদের যোগাযোগ কৌশলে নিজেরাও প্রভাবিত হই।

আমরা প্রায় সার্বক্ষনিক কোনো না কোনোভাবে যোগাযোগে লিপ্ত থাকি। পরিবেশ-পরিস্থিতিভেদে যোগাযোগের উদ্দেশ্য, মাধ্যম, ব্যক্তি ইত্যাদি ভিন্ন হয় বিধায় যোগাযোগের ধরণও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যোগাযোগের তেমনি একটি ধরণ হচ্ছে উন্নয়ন যোগাযোগ।

উন্নয়ন যোগাযোগ মূলত একটি শিক্ষা ও প্রচারণামূলক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে লক্ষিত জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন সম্পর্কিত নানান তথ্য জানানো হয় এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ইতিবাচকভাবে গ্রহণ ও সেগুলোর সুফল ভোগে উৎসাহিত করা হয়। লক্ষিত জনগোষ্ঠীর যথাযথ অংশগ্রহণ ব্যতিত উন্নয়ন কার্যক্রম ফলপ্রসূ হয় না বলে উন্নয়ন যোগাযোগকে বর্তমানে উন্নয়ন কার্যক্রমের অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

উন্নয়ন যোগাযোগ – Development Communication

উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে জনসাধারণের চিন্তা-ভাবনা, কাজকর্মসহ সার্বিক জীবনযাত্রা সহজতর করার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো। কিন্তু, বিশাল জনগোষ্ঠীর চিরায়ত ধ্যান-ধারণা এবং আচরণের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে রাতারাতি নতুন কোনো ধারণা বা ব্যবস্থার প্রচলন করা যথেষ্ঠ দুরূহ কাজ।

উন্নয়ন বা নতুন ধারণার প্রয়োজনীয়তা ও সুফল সম্পর্কে প্রচারণার মাধ্যমে জনগোষ্ঠীর মাঝে সেই বিষয়ে সচেতনতা ও গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। উন্নয়ন যোগাযোগ উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী এবং উন্নয়ন সম্পর্কে উদ্বুদ্ধকরণের এই প্রক্রিয়ায় সেতুবন্ধ হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

প্রাচীন গ্রিসের অন্যতম প্রভাবশালী দার্শনিক প্লেটো তাঁর গুরু সক্রেটিস এবং ফেড্রাসের মধ্যকার সংলাপের বর্ণনায় Phaedrus গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “মানুষের মনোজগৎ নিয়ন্ত্রণের শৈল্পিক দক্ষতাই যোগাযোগ।”1উদ্ধৃতি: “Rhetoric is the art of ruling the minds of men.”; গ্রন্থ: Phaedrus; লেখক: Plato;

অর্থাৎ, কথা কিংবা কাজ, যেভাবেই হোক না কেন, মানুষকে প্রভাবিত করাই হচ্ছে যোগাযোগ। উন্নয়ন যোগাযোগের ক্ষেত্রেও প্লেটোর এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য। কেননা, উন্নয়ন কার্যক্রমের সুফল প্রচারণার মাধ্যমে জনসাধারণের ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি এবং তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করাই উন্নয়ন যোগাযোগ।

‘উন্নয়ন যোগাযোগের জননী’ রূপে পরিচিত নোরা সি. কুইব্রাল-র বর্ণনায়, উন্নয়ন যোগাযোগ হচ্ছে “মানবীয় যোগাযোগের কলা ও বিজ্ঞান, যা একটি দেশের দ্রুত পরিবর্তন এবং দেশটির জনগণের দরিদ্রতা থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োগ করা হয়, যাতে বৃহত্তর সামাজিক সমতা এবং মানব সম্ভাবনার সামগ্রিক পরিপূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়।”2উদ্ধৃতি: “The art and science of human communication applied to the speedy transformation of a country and the mass of its people from poverty to a dynamic state of economic growth that makes possible greater social equality and the larger fulfillment of the human potential.”; গ্রন্থ: Development Communication; লেখক: Nora Cruz Quebral; প্রকাশক: Los Banos College;

উন্নয়ন যোগাযোগবিদ গ্যারি গ্যারি কোল্ডেভিন-র মতে, “উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে এবং মূলত তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে অবগত, অনুপ্রাণিত ও প্রশিক্ষিত করতে উপযুক্ত যোগাযোগের মাধ্যম এবং কৌশলসমূহের নিয়মানুগ ব্যবহার করা” হচ্ছে উন্নয়ন যোগাযোগ।3উদ্ধৃতি: “the systematic utilization of appropriate communication channels and techniques to increase people’s participation in development and to inform, motivate and train rural populations, mainly at the grassroot level.”; গ্রন্থ: Perspectives on communication for rural development; লেখক: Gary Coldevin; প্রকাশকাল: 1987;

বিশ্বব্যাংকের মতে, উন্নয়ন যোগাযোগ হচ্ছে “টেকসই পরিবর্তনকে পৃষ্টপোষকতার লক্ষ্যে উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশীদার তথা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করা”4উদ্ধৃতি: “Support sustainable change in development operations by engaging key stakeholders.”; গ্রন্থ: Development Communication Sourcebook Broadening the Boundaries of Communication; লেখক: Paolo Mefalopulos; প্রকাশক: The World Bank; এবং “ঝুঁকি এবং সুযোগ মূল্যায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি, তথ্য প্রচার, আচরণগত এবং সামাজিক পরিবর্তন প্ররোচিত করা।”5উদ্ধৃতি: “Establish conducive environments for assessing risks and opportunities; disseminate information; induce behavior and social change.”; গ্রন্থ: Development Communication Sourcebook Broadening the Boundaries of Communication; লেখক: Paolo Mefalopulos; প্রকাশক: The World Bank;

উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায়, উন্নয়ন যোগাযোগ হচ্ছে একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে নতুন উদ্ভাবিত ধারণা, প্রযুক্তি কিংবা অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্পর্কে জানানো, যাতে তারা সেসব উন্নয়নের সুফল ভোগ করে। এজন্য, উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর পরিচিত মাধ্যমে কৌশলী উপায়ে যোগাযোগ করতে হবে যেন তারা নতুন ধারণাকে সাদরে গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলোর অধিকাংশ জনগোষ্ঠী আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও প্রথাগত বিশ্বাস ও অন্যান্য কারণে যেকোনো উন্নয়ন সহজেই গ্রহণ করে নেয় না। কিন্তু, অর্থনৈতিক ও সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে তাদেরও সমানুপাতিক উন্নয়ন আবশ্যিক। সেক্ষেত্রে, উন্নয়ন যোগাযোগের প্রধান কার্যক্ষেত্র মূলত সেসব জনগোষ্ঠী।

যোগাযোগ বিষয়ক বিশিষ্ট গবেষক অধ্যাপক মাজিদ তেহরানিয়ানের ভাষ্যমতে, উন্নয়ন যোগাযোগ হলো অর্থনৈতিক গণতন্ত্র (উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান), রাজনৈতিক গণতন্ত্র (অভিগমন এবং অংশগ্রহণ), সামাজিক গণতন্ত্র (সমানাধিকারের সম্প্রসারণ), এবং সাংস্কৃতিক গণতন্ত্র (মতামতের বহুত্ববাদ) এর ক্রমাগত উন্নয়ন।”6উদ্ধৃতি: “Development communication means increasing levels of economic democracy (productive employment), political democracy (access and participation), social democracy (expanding equal opportunities), and cultural democracy (pluralism of meaning).”; গ্রন্থ: Development Theory and Communications Policy: The Changing Paradigm, লেখক: Majid Tehranian, প্রকাশক: New Jersey: Ablex Publications, প্রকাশকাল: 1979;

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো দারিদ্র, ভূমিবন্টন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নারীর অধিকার, খাদ্যের অভাব, শিশু মৃত্যু, বাসস্থানের সমস্যা, পরিবেশ দূষণ, শিক্ষার অভাবসহ নানা ধরনের সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত । এসব সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় তথ্য সেখানকার জনসাধারণের কাছে থাকে না। উন্নয়ন যোগাযোগের উদ্দেশ্য এসব মানুষকে প্রয়োজনীয় উন্নয়নমূলক তথ্য জানানো এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের উৎসাহিত এবং অংশীদার করা।

 

উন্নয়ন যোগাযোগের বৈশিষ্ট্য – Characteristics of Development Communication

উন্নয়ন যোগাযোগ কেবল উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবগত বা অংশীদার করা নয়। বরং, সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন এবং সার্বিক জীবনমানের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণেও উন্নয়ন যোগাযোগ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন যোগাযোগের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ:

 

উদ্দেশ্যমূলক প্রক্রিয়া – Purposeful Process

উন্নয়ন যোগাযোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য সাধনে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ, যোগাযোগের মাধ্যমে তূণমূল পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকেও উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো এবং তাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা।

 

শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া – Educational Process

উন্নয়ন যোগাযোগ একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়াও। উন্নয়ন যোগাযোগের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা হয়, আধুনিক প্রযুক্তি ও ধারণা সম্পর্কে শিক্ষিত করা হয়। ফলে, তারা সেসব প্রযুক্তি, ধারণা কিংবা স্থাপনা ব্যবহার করে নিজেদের জীবনমান উন্নয়ন করতে পারে। 

 

সামাজিক পরিবর্তন – Social Change

উন্নয়ন যোগাযোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সামাজিক পরিবর্তন সাধন। জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম সফল হয় না। এক্ষেত্রে, জনগনকে একটি পরিকল্পিত কাঠামোর সাথে যুক্ত করে কৌশলী যোগাযোগের মাধ্যমে পুরাতন ধ্যান-ধারণার বদলে আধুনিক ধারণা, প্রযুক্তি ইত্যাদি বিশ্বাস ও ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের সামগ্রিক পরিবর্তন আনা হয়। 

 

সমানাধিকার ও স্বাধীনতা – Equality & Freedom

একটি জনগোষ্ঠীর প্রতিটি সদস্যের সমান অধিকার এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে তাদের একটি অংশ পিছিয়ে পরে এবং উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। উন্নয়ন যোগাযোগের বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে সকলকে যথাযথ উপায়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়ে সমাজে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যেখানে সকলে সমান এবং স্বাধীনভাবে সকল উন্নয়নে অংশীদার হতে পারে।

 

উন্নয়ন যোগাযোগের পূর্বশর্ত – Prerequisites of Development Communication

উন্নয়ন যোগাযোগের উদ্দেশ্যই হল জনগনের মাঝে বোধগম্যতা তৈরী করা। যেন বিষয়টা তারা খুব সহজেই মেনে নিতে পারে এবং কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা তৈরী না করে। যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চালু করার উদ্দ্যোগ নেওয়া হয় তা যেন সকলের মাঝে সাড়া ফেলে এবং তার প্রয়োজন অনুভব করে। এক্ষেত্রে আমরা উন্নয়ন যোগাযোগের যে পূর্বশর্তগুলো পাই সেগুলো হলঃ

 

মানবিক ও স্থানিক অভিমুখী দৃষ্টিভঙ্গি – Humane & Spatial Perspectives

উন্নয়ন যোগাযোগের জন্য নির্ধারিত অঞ্চল এবং ঐ অঞ্চলের অজ্ঞ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে –

  •  স্থানীয় মানুষের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে হবে;
  • মানুষের উন্নয়নের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়ে গ্রাম-শহর, ধনী-গরীব,নারী- পুরুষ প্রভৃতির মাঝে আর্থ- সামাজিক এবং যোগাযোগ দূরত্ব কমাতে হরে;

 

যোগাযোগ সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি – Increasing Engagement in Communication

কোন ধরনের যোগাযোগ করলে জনসাধারনের কাছে সহজেই পৌঁছানো যাবে সে অনুযায়ী অথবা জনগনের চাহিদা মোতাবেক যোগাযোগ মাধ্যম নির্বাচন করতে করতে হবে। যেমন-আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ করা যেতে পারে, আবার যদি আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ অপেক্ষা গণযোগাযোগ পদ্ধতি শ্রেয় মনে হয় তবে গণযোগাযোগ পদ্ধতিই গ্রহন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিন্মক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে –

  • সঠিক ও সহজ যোগাযোগ মাধ্যম চিহ্নিত করতে হবে;
  • যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সচল রাখতে হবে;
  • গ্রামীন নেতা বা মঁতমোড়লদের কাজে লাগানো যেতে পারে;
  • উন্নয়ন যোগাযোগে আগ্রহী এমন লোকদের প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে;
  • এলাকার প্রযুক্তিগত প্রাপ্যতা চিহ্নিত করতে হবে;
  • দেশীয় সম্পদের ব্যবহার এবং মানুষের সাক্ষরতার হার চিহ্নিত করতে হবে।

 

যোগাযোগে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ – Confirming Access to Communication

উন্নয়ন বার্তা সবার কাছে সমানভাবে যায় না। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি, অর্থনৈতিক অবস্থা, গণমাধ্যমের আয়ত্তে থাকা ইত্যাদি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এসবের মাধ্যমে মূলত মানুষকে যোগাযোগে সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা হয়, যেন কোন ব্যক্তি যোগাযোগে অংশগ্রহনে বাঁধাপ্রাপ্ত না হয়। এজন্য নিচের কৌশলগুলো অবলম্বন কোরা যেতে পারে –

  • বার্তা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গণমাধ্যম আছে কিনা তা যাচাই করতে হবে;
  • বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এক বা একাধিক মাধ্যম ব্যবহারের সুযোগ আছে কিনা তা যাচাই করা;
  • যোগাযোগকারীর দক্ষতা ও সৃজনশীলতা আছে কিনা তা নিশ্চিত করা।

আবার কখনো গণমাধ্যম প্রচলিত থাকলেও তা জনগনের মাঝে পৌঁছায় না। যেমন –

  • যাদের উন্নয়ন প্রয়োজন নেই তাদের গণমাধ্যম আছে। আর যেখানে উন্নয়ন প্রয়োজন আছে সেখানে গণমাধ্যম নেই;
  • গণমাধ্যমের উপস্থিতি আছে কিন্তু বাৰ্তা উন্নয়ন বান্ধব নয়;
  • গণমাধ্যমের বার্তা পরিবেশগতভাবে উন্নয়ন প্ৰাসঙ্গিক নয়;
  • বার্তার উপযোগিতা আছে, তবে সমাজে অবকাঠামোগত বাঁধা আছে;

 

উন্নয়ন যোগাযোগের কৌশল – Strategies of Development Communication

উন্নয়ন যোগাযোগে শ্রোতা বা উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ইত্যাদি সহ নানাবিধ জটিল বিষয়াবলী পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত বার্তা প্রেরণ বা যোগাযোগ স্থাপন করতে হয় বলে এটি জটিল একটি প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে, উন্নয়ন যোগাযোগকে ফলপ্রসূ করতে নিন্মক্ত কৌশলগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে –

 

শ্রোতা নির্ধারণ – Target Audience

উন্নয়ন প্রকল্পটি কোন শ্রেণির শ্রোতার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে তা নির্ধারন করা। অভিজাত না মধ্যবিত্ত নাকি নিন্মবিত্ত তা নির্ধারন করা, যেন খুব সহজেই তাদের উদ্দেশ্যে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়।

 

শ্রোতাদের জানা – Knowing Audience

যে সম্প্রদায়কে বেঁছে নেওয়া হবে সে সম্প্রদায়ের প্রকৃতি কেমন এবং প্রকল্পটি তাদের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ে যথেষ্ঠ সহায়ক কিনা তা যাচাই করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে যে বিষয়টি তাদের জন্য মঙ্গলজনক এবং তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান সহ অন্যান্য বিষয়েও লাভবান হবে। ফলে সমাজটি উন্নয়নের বিষয়টি অনুধাবন করবে এবং বিষয়টি গ্রহন করবে।

 

প্রয়োজন নির্ধারণ – Determining Need

যে শ্রেনীর মানুষের জন্য বা উদ্দেশ্যে যোগাযোগ করা হচ্ছে তাদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেওয়া। তারা কী চায়? কেন চায়? এসব বিষয় জেনে যোগাযোগ করলে তারা খুব সহজেই তাদের সার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করে।

 

সাদৃশ্য – Similarity

যে প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে তার সাদৃশ্য কোন প্রকল্প থাকলে তার সাথে মিলিয়ে নেওয়া। ফলে পূর্ব প্রকল্পটির কোন অংশ কোথাও ব্যর্থ হলে সে জায়গায় সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় এবং গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা থাকে।

 

সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ – Culture & Norms

শ্রোতাদের সাংস্কৃতিক বিষয়টিও নির্ধারন করতে হবে। তাদের স্বার্থ বিরোধী কোন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না। অন্যের সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা জানানো উন্নয়ন যোগাযোগের পূর্বশর্ত। স্থানীয় আচার-আচরণ,বিশ্বাস,মুল্যবোধ ইত্যাদিও মুল্যায়ন করতে হবে। যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে তা স্থানীয় সমাজের সাথে কতটা সংগতিপূর্ন তা যাচাই করে নিতে হবে।

 

যোগাযোগ মাধ্যম – Communication Channel

বার্তা কিভাবে বন্টন বা ছড়িয়ে দেওয়া হবে তার উপায় নির্ধারন করা। কারন বার্তা প্রদানে ত্রুটি থাকলে বা সফল বার্তা না হলে জনগন তা গ্রহন করবে না। ফলে উন্নয়ন যোগাযোগ ব্যর্থতায় পরিণত হবে। সুষ্ঠ উপায়ে ও অনুকূল পরিবেশে বার্তা দেওয়া উচিত যাতে সকলেই বিষয়টি সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারে এবং তা গ্রহণ করতে পারে। 

সমস্যা ও সম্ভবনা – Problem & Opportunity

সম্প্রদায়ের বিভিন্ন, সমস্যা, সম্ভবনা ও ঝুঁকিসমূহ খুঁজে বের করতে হবে। এবং তা মোকাবিলার সম্ভাব্য পথ খুঁজে দিতে হবে।

 

প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন – Designing the Project

সম্পূর্ণ প্রকল্পটির খসড়া তৈরী করার পর তার কাজ শুরু করতে হবে। এজন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি ও প্রচারণা,শিক্ষাকেন্দ্র ও কর্মশালার আয়োজন করে যোগাযোগ ফলপ্রসু করা যেতে পারে।

স্থানীয় প্ল্যাটফর্ম তৈরী করে সামাজিক অংশগ্রহন মূলক যোগাযোগ করা সম্ভব। প্রকল্প বাস্তরায়নে প্রশিক্ষণ, সর্বপ্রকার তথ্য দিয়ে যোগাযোগ সচল রাখতে এবং প্রেরক ও গ্রাহকদের মাঝে তথ্য জানা সহজ প্রাপ্যতার মাধ্যমে সবার বোধগম্য করে তুলতে হবে, যাতে খুব সহজেই উন্নয়ন যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

 

আধুনিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞগণ উন্নয়ন যোগাযোগ বলতে কেবল উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবগত করার কথাই বলেন নি; বরং, উন্নয়নের মূল পরিকল্পনায় জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং তাদের প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের দিকে অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

তথ্যসূত্র - References

  • 1
    উদ্ধৃতি: “Rhetoric is the art of ruling the minds of men.”; গ্রন্থ: Phaedrus; লেখক: Plato;
  • 2
    উদ্ধৃতি: “The art and science of human communication applied to the speedy transformation of a country and the mass of its people from poverty to a dynamic state of economic growth that makes possible greater social equality and the larger fulfillment of the human potential.”; গ্রন্থ: Development Communication; লেখক: Nora Cruz Quebral; প্রকাশক: Los Banos College;
  • 3
    উদ্ধৃতি: “the systematic utilization of appropriate communication channels and techniques to increase people’s participation in development and to inform, motivate and train rural populations, mainly at the grassroot level.”; গ্রন্থ: Perspectives on communication for rural development; লেখক: Gary Coldevin; প্রকাশকাল: 1987;
  • 4
    উদ্ধৃতি: “Support sustainable change in development operations by engaging key stakeholders.”; গ্রন্থ: Development Communication Sourcebook Broadening the Boundaries of Communication; লেখক: Paolo Mefalopulos; প্রকাশক: The World Bank;
  • 5
    উদ্ধৃতি: “Establish conducive environments for assessing risks and opportunities; disseminate information; induce behavior and social change.”; গ্রন্থ: Development Communication Sourcebook Broadening the Boundaries of Communication; লেখক: Paolo Mefalopulos; প্রকাশক: The World Bank;
  • 6
    উদ্ধৃতি: “Development communication means increasing levels of economic democracy (productive employment), political democracy (access and participation), social democracy (expanding equal opportunities), and cultural democracy (pluralism of meaning).”; গ্রন্থ: Development Theory and Communications Policy: The Changing Paradigm, লেখক: Majid Tehranian, প্রকাশক: New Jersey: Ablex Publications, প্রকাশকাল: 1979;
নিবন্ধটি প্রচার করুন:

⚠️ Copying, Republishing, or Using any content outside of our website (learneraacademy.com), whether for personal, commercial, or educational purpose, is extremely prohibited without prior permission of Learnera Academy. You may share the direct link of pages on social media and through email or other digital media.

This article is written in the Bengali language. References from various sources are mentioned in the reference section (তথ্যসূত্র). Media files are credited in the caption section. If you have any concerns, please get in touch with us at contact@learneraacademy.com

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে
আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

Join As A Content Writer - Learnera Academy
Join As A Content Writer - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ

হলুদ সাংবাদিকতা: কমিকের পাতা থেকে উঠে আসা সাংবাদিকতার অসুস্থ ধারা

ধরুন, একটি সংবাদমাধ্যমে একটি চাঞ্চল্যকর শিরোনাম প্রকাশিত হয়েছে যা হলো: “বিখ্যাত অভিনেত্রীর গোপন বিবাহ!” শিরোনামটি পাঠকদের মনে কৌতূহল জাগায় এবং সংবাদ পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি করে।

ফিচার ইমেজ: ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

বর্তমান পৃথিবীতে খেলাধূলা মানুষের বিনোদনের এক প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর গণমানুষের কাছে খেলাধূলাকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উপভোগ্য করে উপস্থাপন করে চলেছে ক্রীড়া সাংবাদিকগণ। অর্থাৎ

ফিচার ইমেজ: বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

২০০৯ সালের ২৯ মার্চ নবম জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ‘তথ্য অধিকার আইন বিল ২০০৯’ পাস হয়। ৫ এপ্রিল সেই বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে ৬ এপ্রিল আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

ফিচার ইমেজ: শ্রবণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

শ্রবণ প্রক্রিয়া: প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রবণ একটি প্রক্রিয়া এবং বাচনিক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ধরণের যোগাযোগেই শ্রবণের প্রয়োজন হয়। কার্যকর শ্রবণ ব্যতিত যোগাযোগ কখনোই ফলপ্রসূ হয় না।

ফিচার ইমেজ: আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

সহপাঠীদের মধ্যকার সাধারণ সম্পর্কের বাহিরে দুয়েকজন সহপাঠীর সাথে আপনার এই যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে তাই আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বা Interpersonal Relations।

ফিচার ইমেজ: কেস স্টাডি, অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

কেস স্টাডি: অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং কারণ উদ্ঘাটনের প্রয়োজন হলে গবেষকগণ কেস স্টাডি করেন, যেখানে দু’য়েকটি ঘটনার খুঁটিনাটি জেনে বৃহৎ কোনো ঘটনা সামগ্রিকভাবে জানার চেষ্টা করা হয়।

ফিচার ইমেজ: গণমাধ্যম গবেষণায় আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি

আধেয় বিশ্লেষণ: গণমাধ্যম গবেষণায় অত্যাবশ্যকীয় পদ্ধতি

১৯৭১ থেকে ১৯৯৫ সালে সাংবাদিকতা বিষয়ক জার্নালসমূহে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রায় ২৫% ছিল আধেয় বিশ্লেষণ-ভিত্তিক, যা ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মাঝে সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষণার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে ওঠে।

ফিচার ইমেজ: গবেষণা নকশা প্রণয়ন

গবেষণা নকশা: পরিপূর্ণ গবেষণার রূপরেখা প্রণয়ন

যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে নকশা বা পরিকল্পনা প্রণয়ন। গবেষণাও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং, নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে সূচনাতেই গবেষণার সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত
আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Request For Article - Learnera Academy
Request For Article - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Scroll to Top
Learnera Academy Logo