আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ক্লাসের সকল সহপাঠীই কি আপনার বন্ধু? উত্তরে আপনি হয়তো বলবেন, হ্যাঁ। কিন্তু, যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কয়জন? আপনি হয়তো অর্ধশত সহপাঠী থেকে মাত্র এক বা দুইজনের কথা বলবেন।
ক্লাসের সকল সহপাঠীর সাথেই আপনার দৈনিক দেখা-সাক্ষাৎ হয়, পড়াশোনা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। কিন্তু, আপনার সেই ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে এসবের বাইরেও আপনার জীবনের অন্যান্য বিষয় নিয়ে গল্প করেন।
সহপাঠীদের মধ্যকার সাধারণ সম্পর্কের বাহিরে দুয়েকজন সহপাঠীর সাথে আপনার এই যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে তাই আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বা Interpersonal Relationship।
আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক – Interpersonal Relationship
আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক যোগাযোগের অন্যতম মৌলিক ধারণা ও বিষয়বস্তু। সাধারণত, আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বলতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কিংবা একটি ছোট দলের মধ্যকার ঘনিষ্ঠ পারস্পারিক সম্পর্ককে বুঝানো হয়।
আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতাই মুখ্য, সম্পর্কের কারণ বা ধরণ নয়। এধরণের সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীগণ পরস্পরের উপর নির্ভরশীল থাকে এবং একে অপরকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীরা পূর্বপরিচিত হয় এবং নিজেদের মাঝে নিয়মিত তথ্য, অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, মতামত, সহযোগিতা ইত্যাদি আদান-প্রদান করে। স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গের মাঝে গড়ে উঠা সম্পর্ক আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের প্রকৃষ্ট কিছু উদাহরণ।
আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক – আপনার এক সহপাঠীকে আপনি বন্ধু ভাবেন, যার সাথে আপনার প্রতিদিনই ব্যক্তিগত এবং অন্যান্য বিষয়ে গল্প হয়, সেই বন্ধুও আপনাকে তার মনের সব কথা বলে। আপনাদের বন্ধুত্বের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কটি আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক।
অন্যদিকে, আপনার নিকটস্থ দোকানের যিনি দোকানদার, তার সাথেও আপনার পরিচয় আছে, পণ্য কেনা-বেচা নিয়ে প্রায়ই কথাবার্তা হয়। কিন্তু, ঘনিষ্ঠতার অভাবে দোকানদারের সাথে আপনার এই সম্পর্কটি আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক নয়।
আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গঠনের ধাপ
পারস্পারিক পরিচয়, বিশ্বাস, প্রতিশ্রুতি, আনুগত্য, অনুভূতি ইত্যাদির ভিত্তিতে সাধারণত সকল আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু হুট করেই এধরণের সম্পর্ক তৈরি হয় না। একটু ভেবে দেখুন তো, প্রথম দিনেই কি একজন সহপাঠী আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গিয়েছিলো? নিশ্চয়ই না!
যোগাযোগবিদদের মতে, বেশ কয়েকটি ধাপে একটি আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। সময়ের সাথে সাথে সেই সম্পর্কে অবনতিও ঘটতে পারে। পরবর্তীতে সেই সম্পর্ক মেরামতের সুযোগ থাকে। আবার, টানাপোড়নের এক পর্যায়ে সম্পর্কের সমাপ্তিও ঘটতে পারে।
বিশিষ্ট যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ জোসেফ এ ডেভিটো তাঁর ‘The Interpersonal Communication Book’ গ্রন্থে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গঠনের এমনই ছয়টি ধাপের কথা আলোচনা করেছেন।1গ্রন্থ: The Interpersonal Communication Book; সংস্করণ: ১৩তম; লেখক: Joseph A Devito; ধাপ গুলো হলো –
- সংযোগ – Contact
- সম্পৃক্ততা – Involvement
- ঘনিষ্ঠতা – Intimacy
- অবনতি – Deterioration
- মেরামত – Repair
- বিচ্ছেদ – Dissolution
সংযোগ – Contact
সংযোগ হলো সম্পর্কের প্রারম্ভিক ধাপ। এই ধাপে অপর পাশের মানুষটির সম্পর্কে আমাদের প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়। তার শারীরিক গঠন, কথা, অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি দেখে আমরা আমাদের মস্তিষ্কে তার সম্পর্কে একটি সার্বিক চিত্র আঁকি। এটি হলো Perceptional বা অনুধাবনমূলক পর্যায়। এখানে ব্যক্তি উপর থেকে দেখে সামনের জনকে বিচার করে।
আরেকটু সহজভাবে যদি বলি, ধরুন, আপনি কোনো সেমিনারে গেলেন। সেমিনার কক্ষে প্রবেশ করেই আপনি বেশ কয়েকজন মানুষ দেখলেন এবং তাদের একজনের দিকে আপনার নজর পড়লো। এখন আপনার মনে তার শারিরীক গঠন, উচ্চতা, বয়স ইত্যাদি সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হবে। একইসাথে তার বসার ধরন, পোশাক, চেহারার অভিব্যক্তি আপনাকে ধারণা দিবে সে আসলে কেমন মানুষ হতে পারে।
এই ধারণা গুলোর উপর ভিত্তি করেই সাধারণত আমরা অন্যদের সাথে কথা বলার আগ্রহ বা অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকি। এরপর আপনি উক্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে তার সাথে কথা বলতে পারেন, তার পাশের চেয়ারে বসার অনুমতি চাইতে পারেন। এখানে আপনার সাথে ঐ ব্যক্তির Interaction বা পারস্পরিক সংযোগ ঘটছে।
এসময় আপনি তার সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা পাবেন, যা উক্ত ব্যক্তিকে আপনার সামনে পরিপূর্ণ ভাবে চিত্রিত করবে। তবে সংযোগের সময় পাওয়া ধারণা সঠিক হতেও পারে, নাও হতে পারে। সংযোগের সময়ই একজন ব্যক্তি সম্পর্কে আমাদের প্রথম অভিব্যক্তি বা First Impression তৈরি হয়।
গবেষকদের মতে, সম্পর্কের এই ধাপে প্রাথমিক মিথষ্ক্রিয়ার প্রথম চার মিনিটের মধ্যেই একজন ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেন যে, উক্ত সম্পর্কে তিনি অগ্রসর হবেন কি না।2গ্রন্থ: Contact: the First Four Minutes; লেখক: Leonard Zunin, Natalie Zunin; প্রকাশনী: Nash Publishing; প্রকাশকাল: ১৯৭২;
সংযোগের সময় শারীরিক উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ব্যক্তির শারিরীক উপস্থিতিতে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য গুলো বেশি দৃশ্যমান হয়। একই সাথে তার বাচনিক, অবাচনিক আচরণ, ব্যক্তিগত গুণাবলী যেমন অন্তর্মুখী, বন্ধুত্বসুলভ, সৌহার্দ্যপূর্ণ, বা রাগী, অহংকারী ইত্যাদি আচরণ সহজে প্রকাশ পায়। যা হয়তো অনলাইনে বা তাকে সরাসরি না দেখে বোঝা সহজ নয়।
সম্পৃক্ততা – Involvement
সংযোগ শেষ হলে আমরা আসি সম্পৃক্ততায়। এই ধাপে আমরা সামনের ব্যক্তিটি সম্পর্কে প্রাথমিকের চেয়ে আরও বেশি জানার চেষ্টা করে থাকি। অপর মানুষটি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা কতটুকু সঠিক তা জানার প্রচেষ্টা এই ধাপে ব্যক্তির মাঝে দেখা যায়।
পূর্বের উদাহরণ অনুযায়ী, উক্ত ব্যক্তির পাশে বসার পর আপনি তার নাম জানতে চাইতে পারেন। তিনি কী করেন, কোথায় থাকেন ইত্যাদি জিজ্ঞেস করতে পারেন। তার সম্পর্কে আরও বেশি জানতে চাইলে আপনি তার সাথে প্রাথমিকের চেয়ে গভীর আলোচনায় যেতে চেষ্টা করবেন।
এক্ষেত্রে আপনি নিজের সম্পর্কে তাকে জানাতে পারেন। এতে করে সামনের ব্যক্তিও তার সম্পর্কে আপনাকে জানাতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। যখন ব্যক্তিদ্বয় পরস্পর সম্পর্কে নিশ্চিত হন, তখন সম্পর্কে গভীরতা বা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়, ব্যক্তিগত তথ্যাদি, মতামত, অনুভূতি ইত্যাদি আদান-প্রদান হয়, দু’জনের মাঝে বোঝাপড়া বাড়তে থাকে।
রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি যার সম্পর্কে জানতে চায় সাধারণত তাকে অনলাইনে অনুসরণ করতে পারে। তার সাথে সম্পৃক্ততা বাড়াতে ঘন ঘন বার্তা আদান-প্রদান করতে পারে। এছাড়া ঘন ঘন সাক্ষাৎ, উপহার আদান-প্রদান, প্রশংসা ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি করতে পারে। যা উক্ত সম্পর্ককে পরবর্তী ধাপে যেতে সাহায্য করবে।
ঘনিষ্টতা – Intimacy
সংযোগ ও সম্পৃক্ততার সমন্বয়ে সম্পর্ক উন্নত হয়ে পৌঁছায় ঘনিষ্ঠতায়। এই পর্যায়ে এসে দু’জন ব্যক্তি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে। তারা নিজেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, প্রেমী বা সহযোগী হিসেবে প্রকাশ করে থাকে।
এই ধাপে দু’জনের মাঝে আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ আগের চেয়ে বেড়ে যায়। নিজেদের সম্পর্ক বিষয়ক আলোচনা বেড়ে যায়। পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি ঘনিষ্ঠতার ধাপে দেখা যায়।
সম্পর্কের পূর্ণতার জন্য ঘনিষ্ঠতা গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সম্পৃক্ততার পর ব্যক্তির স্বীকৃতি দরকার হয়, যা ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। আন্তঃব্যক্তিক প্রতিশ্রুতি এবং সামাজিক বন্ধন – এই দুইভাবে ঘনিষ্ঠতার ধাপটি সম্পন্ন হতে পারে।
ব্যক্তিদ্বয় যখন নিজেরা একটি সম্পর্কে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় এবং তাদের এই প্রতিশ্রুত সম্পর্ক ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ রাখে, তখন তা আন্তঃব্যক্তিক প্রতিশ্রুতির পর্যায়ে পড়ে। এপর্যায়ে ব্যক্তিদ্বয় নিজেদের সম্পর্কে সমাজকে অবগত করে না। বরং এসময় ব্যক্তির মাঝে সম্পর্কের গোপনীয়তা বজায় রাখার প্রবণতা দেখা যেতে পারে।
অন্যদিকে সামাজিক বন্ধন পর্যায়ে সম্পর্কটি সামাজিক স্বীকৃতি পায়। এক্ষেত্রে অন্যতম একটি উদাহরণ হলো ‘বিবাহ’। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সামাজিক রীতিনীতি মেনে দু’জন ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় বিবাহের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে তারা দম্পতি বা জুটি হিসেবে পরিচিতি পায় সমাজের কাছে।
অবনতি – Deterioration
এই ধাপে সম্পর্কের বন্ধন দূর্বল হয়ে পড়ে। এই ধাপের প্রাথমিক পর্যায়কে বলা হয় আন্তঃব্যক্তিক অসন্তোষ। আন্তঃব্যক্তিক অসন্তোষে প্রতিদিনের মিথষ্ক্রিয়ায় ব্যক্তি আগের মত ঘনিষ্ঠতা খুঁজে পায় না। বরং সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত থাকে।
আন্তঃব্যক্তিক অসন্তোষ দীর্ঘ সময় ধরে চললে অবনতির দ্বিতীয় ধাপ তথা আন্তঃব্যক্তিক দূরত্ব তৈরি হয়। সম্পর্ক নিয়ে অসন্তোষ যত বাড়তে থাকে, ব্যক্তিদ্বয়ের মাঝে আন্তঃব্যক্তিক দূরত্বও ততই বাড়ে। সম্পর্ক ভেদে অবনতির ধরনে ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে অবনতির কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য কম বেশি সকল সম্পর্কে দেখা যায়।
যেমন, দু’জন একসাথে সময় কাটানো, কথা বলা, নিজেকে প্রকাশ করা কমে যায়। অন্যদিকে নীরবতা, শারীরিক ও মানসিক দূরত্ব বেড়ে যায়। এই পর্যায়ে দ্বন্দ্ব সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়, সমাধান হয়ে উঠে আরও কঠিন। এমনকি, যথাযথ মেরামতের অভাবে সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরে সম্পর্কে বিচ্ছেদও ঘটতে পারে।
মেরামত – Repair
মেরামত হলো সম্পর্কের এমন একটি পর্যায় যেখানে অবনতির কারণে থেমে যাওয়া সম্পর্ক আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। পুরোনো আসবাবপত্র যেমন একটা সময় পর নষ্ট হয়ে গেলে সামান্য মেরামতের মাধ্যমে আবারও ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠে, মাঝে মাঝে সম্পর্কেও ঠিক তেমনি মেরামতের প্রয়োজন হয়।
সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তিগণ নিজেদের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় অবনতি ঘটা একটি সম্পর্ককে মেরামতের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে পারে। এই মেরামত হাতুড়ি পেরেক দিয়ে নয়, বরং সমঝোতা, সহমর্মিতা ও সম্পর্ক মূল্যায়নের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অন্তর্ব্যক্তিক মেরামত ও আন্তঃব্যক্তিক মেরামত – এই দু’টি কৌশলে সম্পর্কের কার্যকর মেরামত করা যেতে পারে।
অন্তর্ব্যক্তিক মেরামত হচ্ছে সম্পর্কে অবনতির জন্য দায়ী নিজের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করা। এক্ষেত্রে নিজের আচরণ ও সঙ্গী হতে প্রত্যাশায় পরিবর্তন আনতে হবে, নিজের ভুল ও করনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।
আন্তঃব্যক্তিক মেরামতের মাধ্যমেও সম্পর্ক মেরামত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে, সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তিগণ পারস্পারিক আশা-আকাঙ্ক্ষা, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সরাসরি আলোচনা করে সম্পর্ক মেরামত করবে।
আন্তঃব্যক্তিক মেরামতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ এবং মেরামতের মানসিকতা থাকা। প্রয়োজনে সম্পর্ক মেরামতের জন্য পরিবার, বন্ধু বা সামাজিক সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। কাউন্সেলিং বা মনোবিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমেও সম্পর্ক মেরামত করা সম্ভব।
বিচ্ছেদ – Dissolution
অবনতি ঘটা একটি সম্পর্ক কোনোভাবেই মেরামত করা না গেলে তা বিচ্ছেদের দিকে এগোয়। বিচ্ছেদের মাধ্যমে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যকার সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যায়। আন্তঃব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতা ও সামাজিক বিচ্ছেদ – এই দুইভাবে সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটতে পারে।
আন্তঃব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রে সাধারণত সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তিগণ একে অপরকে এড়িয়ে চলে এবং যোগাযোগের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফলে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতার পরিবর্তে বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়। এই বিচ্ছিন্নতার স্থায়িত্ব দুই মাস, ছয় মাস কিংবা এক বছরও হতে পারে।
সামাজিক বিচ্ছেদ হচ্ছে অবনতি ঘটা সম্পর্কের সর্বশেষ বা চূড়ান্ত পরিণতি। এর মাধ্যমে সামাজিক বা আইনগতভাবে একটি আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের সমাপ্তি ঘটে, যেমন – ডিভোর্স বা তালাক প্রদান। ফলশ্রুতিতে সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তিগণ একে অপর থেকে স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিচ্ছেদের পর সেই সম্পর্কে জড়িত ব্যক্তিগণ নতুন কোনো আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক গঠন করে। অনেকে আবার নতুন সম্পর্কে না জড়িয়ে পুরনো সম্পর্কের স্মৃতিচারণে আটকে থাকে। এধরণের ব্যক্তিরা সাধারণত সম্পর্কের বিচ্ছেদ চায় না, কিন্তু তাদের পক্ষে সম্পর্ক মেরামতও সম্ভব হয় না।
তথ্যসূত্র - References
- 1গ্রন্থ: The Interpersonal Communication Book; সংস্করণ: ১৩তম; লেখক: Joseph A Devito;
- 2গ্রন্থ: Contact: the First Four Minutes; লেখক: Leonard Zunin, Natalie Zunin; প্রকাশনী: Nash Publishing; প্রকাশকাল: ১৯৭২;