Learnera Academy Logo
Search
Close this search box.

ফ্যাক্ট চেকের পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা

ফিচার ইমেজ: ফ্যাক্ট চেকের পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা
ফিচার ইমেজ: ফ্যাক্ট চেকের পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা। Image by Macrovector on Freepik

সূচিপত্র

ফ্যাক্ট চেক বা ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন তৈরির পদ্ধতি সংবাদ প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়ার প্রায় অনুরূপ এবং সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই সাধারণত ফ্যাক্ট চেকার হিসেবে কাজ করে থাকেন। তবে, প্রথাগত সংবাদ প্রতিবেদন এবং ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন তৈরির পদ্ধতি সম্পূর্ণ সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।

বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থে সংবাদ প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিংবা প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্যের ভিত্তিতে ঘটনার সরাসরি বিবরণ তুলে ধরা হয়। অপরদিকে, ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদনে প্রকৃত ঘটনা জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেয়া হলেও নির্ভরযোগ্য দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে তথ্যের যথার্থতা নিরূপণ করা হয়।

একটি তথ্য বা সংবাদের সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের পুরো প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি অনেকগুলো ধাপে সম্পন্ন হয়। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন তৈরিতে ফ্যাক্ট চেকারের বেশ কিছু দক্ষতা এবং গুণাবলি থাকতে হয়।

 

ফ্যাক্ট চেকের পদ্ধতি – Method of Fact Check

ফ্যাক্ট চেকের পুরো প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধাপে একটি নিয়মানুগ পদ্ধতিতে সম্পন্ন করতে হয়। আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন)-র নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার সুনির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি থাকা এবং সকল প্রতিবেদন তৈরিতে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক, যাতে নিরপেক্ষতা ও গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।

তথ্য, ঘটনা বা সংবাদ নির্বাচন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ এবং প্রয়োজনে তা সংশোধন পর্যন্ত ফ্যাক্ট চেকের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিই নির্দিষ্ট সেই পদ্ধতির হুবহু অনুসরণে সম্পূর্ণ করতে হবে। বিষয়বস্তু কিংবা স্থান-কাল-পাত্রভেদে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদনে ভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না।

স্বীকৃত ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলো তাদের কর্মক্ষেত্র তথা তারা যেই দেশ বা অঞ্চলের তথ্য নিয়ে ফ্যাক্ট চেক করে, সেখানকার জনসংখ্যা, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রভাব ইত্যাদির আলোকে নিজেদের পদ্ধতি নির্ধারণ করে। এতে সংস্থাভেদে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সকলেই প্রতিবেদন তৈরিতে প্রধান কিছু ধাপ অতিক্রম করার মাধ্যমে ফ্যাক্ট চেকের মৌলিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। এই ধাপগুলো হচ্ছে –

 

ঘটনা নির্বাচন – Selecting Fact

ফ্যাক্ট চেকের প্রথম ধাপটি হচ্ছে তথ্য, ঘটনা বা সংবাদ নির্বাচন। ফ্যাক্ট চেকের জন্য কোন তথ্য বা সংবাদটি নির্বাচন করা হবে এবং কেন নির্বাচন করা হবে – সর্বপ্রথম তা নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণত তথ্য বা সংবাদের ব্যাপ্তি, জনজীবনে এর প্রভাব ইত্যাদির আলোকে ফ্যাক্ট চেকের বিষয়বস্তু নির্বাচন করা হয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাঠক-দর্শকের অনুরোধ সাপেক্ষেও কোনো ঘটনা ফ্যাক্ট চেকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।

উদাহরণ স্বরূপ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে অনেক লেখক নাটক-উপন্যাস রচনা করেন।  সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লেখকরা প্রচলিত গল্পকথা কিংবা নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে কল্পনাপ্রসূত অনেক কিছু লিখে থাকেন। এগুলোর সাহিত্যমান যতই ভালো হোক না কেন, তা কখনোই নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস নয়।

সচেতন পাঠকবৃন্দও এগুলোকে তথ্যের উৎস হিসেবে গ্রহণ করে না বিধায় সাহিত্যে উল্লেখিত ঘটনা বা তথ্যের যথার্থতা যাচাই সাধারণত অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু, ঘটনাচক্রে উপন্যাসের অংশবিশেষ সত্য তথ্য বা তথ্যসূত্র হিসেবে ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে (ভাইরাল) এবং উল্লেখযোগ্য মানুষ তা বিশ্বাস ও প্রচার করলে বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন তৈরি করা প্রয়োজন।

 

দাবি চিহ্নিতকরণ – Identifying Claim

ঘটনা নির্বাচনের পরবর্তী ধাপ হচ্ছে ঘটনা বা তথ্যের মূল দাবিটি চিহ্নিত করা। একটি তথ্য, ঘটনা বা সংবাদে একাধিক দাবি থাকতে পারে এবং সবগুলো দাবি ভুল বা মিথ্যা না-ও হতে পারে। তাই, নির্বাচিত তথ্য, ঘটনা বা সংবাদের বিবরণ থেকে মূল দাবি বা কোন দাবিটি নিয়ে ফ্যাক্ট চেক করা প্রয়োজন, তা চিহ্নিত করতে হবে এবং প্রতিবেদনে সেই দাবিটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

যেমন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে হুমায়ূন আহমেদের ‘দেয়াল’ এবং শাহাদুজ্জামানের ‘ক্রাচের কর্নেল’ উপন্যাস থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন। ফ্যাক্ট চেকের ক্ষেত্রে এসব উদ্ধৃতি দিয়ে রাজনৈতিক কর্মীরা আসলে কি দাবি করতে চাচ্ছেন, তা চিহ্নিত করতে হবে।

 

প্রমাণাদি সংগ্রহকরণ – Gathering Evidence

ঘটনা নির্বাচন এবং দাবি চিহ্নিত করার পাশাপাশি কে বা কারা সর্বপ্রথম এই দাবিটি প্রচার করেছেন, এই ধাপে সেটি খুঁজে বের করতে হবে। প্রমাণ হিসেবে প্রথম দাবিকারীর দেয়া বক্তব্য কিংবা প্রচারিত ছবি, ভিডিও বা পোস্ট সংগ্রহের পাশাপাশি তার/তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে অধিকতর প্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

প্রথম দাবিকারীকে খুঁজে পাওয়া না গেলে যাদের মাধ্যমে দাবিটি সবচেয়ে প্রচার হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের প্রচারিত ছবি, ভিডিও বা পোস্টের স্ক্রিনশট ও লিংক প্রমাণ হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে। এধরণের ব্যক্তিরা প্রায়ই নিজেদের আড়ালে রাখতে ভুল তথ্য ও ভুয়া সংবাদ ছড়িয়ে দিয়ে প্রথম পোস্টটি সরিয়ে ফেলে। তাই, প্রমাণ রক্ষার্থে লিংকের সাথে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করাও খুবই জরুরি।

 

তথ্য সংগ্রহকরণ – Collecting Information

ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে সংগৃহীত প্রমাণাদির যথার্থতা নিরূপণে সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা। এক্ষেত্রে, স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে সর্বশেষ বা সাম্প্রতিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে হবে।

নির্ভরযোগ্য এবং সর্বশেষ তথ্যের আলোকে ঘটনার বিশ্লেষণ করা না হলে প্রতিবেদনের উপসংহারে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই, এই ধাপে বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান এবং পুরনো তথ্যকে প্রামাণ্য তথ্যের সূত্র হিসেবে নেয়া যাবে না।

 

বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহণ – Taking Experts’ Feedback

রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ঘটনার পাশাপাশি ধর্মীয়, বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসা-সংক্রান্ত অনেক স্পর্শকাতর বিষয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। যথাযথ প্রমাণ ও তথ্য থাকলেও একজন ফ্যাক্ট চেকারের পক্ষে এসব বিষয়ে যথাযথ বিশ্লেষণ কতটা সম্ভব ও সমীচীন, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

প্রতিবেদনের যথার্থতা বা নির্ভুলতার স্বার্থে এধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে ফ্যাক্ট চেকের ক্ষেত্রে প্রতিবেদকের উচিত সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে সংগৃহীত প্রমাণ ও তথ্যগুলো উপস্থাপন করে ঘটনা সম্পর্কে তাদের পরামর্শ বা মতামত নেয়া এবং সেই আলোকে বিশ্লেষণ করা। বিশেষজ্ঞের নিরপেক্ষতা ও সততা নিশ্চিতকরণে একাধিক সূত্র থেকে পরামর্শ গ্রহণ এবং সেগুলো ক্রসচেকের মাধ্যমে সমন্বয় করা উচিত।

 

প্রতিবেদন তৈরি – Making Report

সকল প্রমাণ, তথ্য ও মতামত নেয়া শেষে এই ধাপে প্রতিবেদনটি লিখতে হবে। প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে আইএফসিএন প্রণীত ফ্যাক্ট চেকের সার্বজনীন নীতিমালা এবং সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ও প্রকাশিত অন্যান্য নীতিমালাগুলোও অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

প্রতিবেদনের শুরুতে দাবি অর্থাৎ, কোন ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে এবং ঘটনার ব্যাপ্তি ও প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা দিতে হবে। তারপর সংগ্রহীত প্রমাণ ও তথ্য এবং এগুলো সংগ্রহের পদ্ধতি সহ বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। প্রমাণ ও তথ্যগুলো ইন্টারনেটে প্রাপ্তিযোগ্য হলে লিংক সংযুক্ত করে দিতে হবে। অন্যথায়, যথাযথ তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামত নেয়া হলে সেগুলোও হুবহু তুলে ধরতে হবে। সবশেষে সংগৃহীত এবং প্রতিবেদনে উল্লেখিত প্রমাণ, তথ্য ও মতামতের ভিত্তিতে ঘটনা সম্পর্কে একটি নিরপেক্ষ, সুস্পষ্ট ও যথার্থ উপসংহার টানতে হবে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় নি, এমন প্রমাণ, তথ্য ও মতামত কিংবা প্রতিবেদকের নিজস্ব চিন্তাধারার আলোকে কোনো সিদ্ধান্ত উপসংহারে যোগ করা যাবে না।

 

প্রতিবেদন সম্পাদনা – Editing Report

প্রতিবেদন তৈরির পর দক্ষ ও অভিজ্ঞ সম্পাদনা পর্ষদ কর্তৃক প্রতিবেদনের সকল প্রমাণ, তথ্য, মতামত এবং উপসংহার বা সিদ্ধান্ত খুবই সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রতিবেদনে শব্দচয়ন, বাক্যগঠন এবং উদ্দিষ্ট ভাব সুস্পষ্ট কিনা, তাও যাচাই করে দেখতে হবে।

প্রতিবেদনে জটিল শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করলে সাধারণ পাঠকরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। প্রমাণ, তথ্য, মতামত এবং সিদ্ধান্তে ভুল-ভ্রান্তি থাকলে সেগুলোও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাই, প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বেই ভুল-ভ্রান্তি থাকলে তা সংশোধন এবং সমগ্র প্রতিবেদনটি সহজেই বোধগম্য কি না, কঠোর সম্পাদনা নীতির মাধ্যমে বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।

 

প্রকাশনা ও প্রচারণা – Publication & Publicity

সম্পাদনা শেষে এবার প্রতিবেদন প্রকাশের পালা। ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাগুলো সাধারণত নিজস্ব ওয়েবসাইটে ব্লগ বা নিবন্ধ আকারে প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবেদনের লিংক এবং ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশনার পাশাপাশি জনসচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপ ও চ্যাট গ্রুপ এবং অন্যান্য মাধ্যমে প্রতিবেদনটি প্রচার করতে হবে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ব্লগ পড়ার চেয়ে ভিডিও দেখতে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বিধায় সক্ষমতা থাকলে ভিডিও প্রতিবেদনের মাধ্যমেও প্রচারণা চালাতে হবে।

 

সংশোধন ও হালনাগাদ করণ – Correction & Update

প্রতিবেদন প্রকাশের পর কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে কিংবা দর্শক-পাঠকরা কোন ভুল-ভ্রান্তি চিহ্নিত করলে তা সাদরে গ্রহণপূর্বক সংশোধিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। সাম্প্রতিক, প্রাসঙ্গিক বা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলো সময়ে সময়ে সর্বশেষ তথ্য দিয়ে হালনাগাদ করতে হবে।

প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিরূপণ এবং বিভ্রান্তি থেকে দূরে থাকতে সংশোধন ও হালনাগাদ করা হলে সুস্পষ্টভাবে কি ভুল ছিল, তা কি কারণে এবং কবে সংশোধন করা হয়েছে, এসব তথ্য উল্লেখ করতে হবে। উপসংহার বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হলে পূর্বের উপসংহারটিও রাখতে হবে। 

পাশাপাশি ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং যেখানে যেখানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে, সেখানে প্রতিবেদনটি সংশোধন, হালনাগাদ করণ বা পরিবর্তনের বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘোষণার মাধ্যমে পাঠক-দর্শকদের দৃষ্টিগোচর করতে হবে, যাতে প্রতিবেদনটি পুনরায় কোনো ধরণের বিভ্রান্তি না ছড়ায়।

 

ফ্যাক্ট চেকের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা – Essential Skills for Fact-Check

সঠিক পদ্ধতিতে ফ্যাক্ট চেক এবং ঘটনা ও দাবি চিহ্নিতকরণ, প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহণ, প্রতিবেদন তৈরি ও সম্পাদনা ইত্যাদি ধাপগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, এগুলো করতে কোন দক্ষতাগুলো প্রয়োজন? একজন ফ্যাক্ট চেকারের কি কি গুণাবলি থাকা দরকার?

প্রকৃতপক্ষে, ফ্যাক্ট চেক সাংবাদিকতারই বিশেষায়িত একটি ধরণ। তাই, একজন আদর্শ ও দক্ষ সাংবাদিকের যেসব গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, ফ্যাক্ট চেকারেরও সেই গুণাবলি ও দক্ষতাগুলো থাকতে হবে। 

বর্তমানে পেশাগত সাংবাদিক ছাড়াও অনেকে ফ্যাক্ট চেকিং করতে আগ্রহী হচ্ছে। গণমাধ্যম স্বাক্ষরতা এবং সচেতনতার অংশ হিসেবে সকলেরই ফ্যাক্ট চেকিং সম্পর্কে মৌলিক ধারণা রাখা জরুরি। সেই বিবেচনায় ফ্যাক্ট চেকের জন্য যেসব প্রয়োজনীয় দক্ষতা বা গুণাবলি থাকা উচিত, সেগুলো হচ্ছে –

 

গভীর চিন্তাভাবনা ও পর্যবেক্ষণ – Critical Thinking & Observation

‘খুঁতখুঁতে স্বভাব’ বা যেকোনো বিষয়কে সহজভাবে গ্রহণ না করার মানসিকতা স্বাভাবিক জীবনে নেতিবাচক হলেও এটি ফ্যাক্ট চেকের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। বর্তমানে কৌশলী অপপ্রচারকারীরা ফ্যাক্ট চেকারদের চোঁখে ধুলা দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে এমনভাবে ভুল তথ্য ও ভুয়া সংবাদ ছড়ায় যে, আপাত দৃষ্টিতে সেগুলো ‘বিশ্বাসযোগ্য’ বলেই মনে হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কিংবা ইন্টারনেটে যা দেখা যায়, তাই বিশ্বাস করে ফেলার পরিবর্তে সকল কিছু নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা ও পর্যবেক্ষণের গুণাবলি ফ্যাক্ট চেকের জন্য ঘটনা ও দাবি চিহ্নিত করতে সহায়তা করে।

 

অনুসন্ধান ও গবেষণা দক্ষতা – Investigation & Research Skills

ভুল তথ্য বা সংবাদের উৎস চিহ্নিত করণ এবং প্রমাণাদি সংগ্রহে অনুসন্ধানের যেমন বিকল্প নেই, তেমনি তথ্যের যথার্থতা নিরূপণে গবেষণার মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য ও সর্বশেষ তথ্য সংগ্রহ এবং বস্তুনিষ্ঠ উপসংহার টানতেও গবেষণা দক্ষতা আবশ্যক।

দক্ষ অনুসন্ধান ও গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমেই কেবল বিভ্রান্তিকর তথ্য ও সংবাদের বিপরীতে নির্ভরযোগ্য ও যথাযথ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে শক্তিশালী ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব।

 

ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা – Internet Browsing Skill

বর্তমানে প্রায় সকল ভুল তথ্য ও সংবাদই ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। আবার, এসব চিহ্নিত করা এবং সেগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রমাণ, তথ্য এবং সফটওয়্যারও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহার করতে হয়।

গুগল, ফেসবুক এবং অন্যান্য বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ফ্যাক্ট চেকিং, ভেরিফিকেশন এবং ডাটা এনালাইসিস টুলস আছে, যেগুলো দিয়ে এসব প্লাটফর্মে প্রচারিত যেকোনো তথ্য বা সংবাদের উৎস, মেটা ডাটা ইত্যাদি সহজেই খুঁজে বের করা যায়।

এছাড়াও, ইন্টারনেটে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য অসংখ্য কার্যকরী টুলস ও রিসোর্স আছে। ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য এসব প্রযুক্তির সহায়তা নিতে ইন্টারনেট ব্যবহারের উচ্চতর দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

 

সামাজিক ও যোগাযোগ দক্ষতা – Social & Communication Skills

ফ্যাক্ট চেকিংয়ের জন্য প্রমাণ ও তথ্য সংগ্রহ এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণে ফ্যাক্ট চেকারের যোগাযোগ দক্ষতা বিশেষ ভূমিকা রাখে। উদ্দিষ্ট সূত্র বা ব্যক্তি থেকে কাঙ্ক্ষিত তথ্য সবিস্তরে জেনে নিতে যোগাযোগ দক্ষতা ও কৌশলের বিকল্প নেই।

একইভাবে সামাজিক সম্পর্ক ও দক্ষতা প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণের উৎস ও সূত্র এবং কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদের সাড়া পেতে সহায়তা করে। ঘটনার পিছনের ঘটনা কিংবা গোপন তথ্য জানতে সামাজিক ও যোগাযোগ দক্ষতা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

 

দৃঢ় মনোবল ও নিরপেক্ষতা – Strong Mindset & Non-Partisanship

ফ্যাক্ট চেকিং মানে প্রতিষ্ঠিত তথ্য বা সংবাদের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই, যেখানে অপপ্রচারকারীদের পাশাপাশি ইতোমধ্যে তথ্য বা সংবাদটির গ্রাহক জনসাধারণের বিশ্বাস-মতামত পরিবর্তনের সংগ্রামও করতে হয়। গণমাধ্যম স্বাক্ষরতার অভাবে অথবা স্পর্শকাতর বিষয়ে সাধারণ পাঠক-দর্শকরাও অনেক সময় ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন বা কার্যক্রমকে নেতিবাচকভাবে দেখতে পারে।

এধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফ্যাক্ট চেকারদের দরকার দৃঢ় মনোবলের সাথে নিঃসংকোচে কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং দর্শক-পাঠকদের আস্থা অর্জনে প্রতিবেদন ও সকল কার্যক্রমে নিরপেক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা।

 

বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন দক্ষতা – Analytical & Presentation Skills

ফ্যাক্ট চেকের প্রধানতম লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে তথ্যের যথার্থতা নিশ্চিত করা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ও সংবাদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। রাজনীতি, ধর্ম, বিজ্ঞান ইত্যাদির জটিল বিষয়গুলো নিয়ে অধিকাংশ মানুষেরই গভীর জ্ঞান ও বিচার-বিবেচনার সুযোগ থাকে না। ফলে, তারা যা শুনে-দেখে, সরল মনে তাই বিশ্বাস করে ফেলে।

এক্ষেত্রে, ফ্যাক্ট চেকারের সহজ ভাষায় বিশ্লেষণ এবং আকর্ষণীয়ভাবে প্রতিবেদন উপস্থাপনের দক্ষতা সাধারণ মানুষের মাঝে দারুণভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারে।

 

ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহের কারণে বর্তমানে যেকোনো তথ্য মুহূর্তেই দেশ-দেশান্তরে ছড়িয়ে পরে এবং অসংখ্য মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এর প্রভাবে মূলধারার গণমাধ্যমও প্রায়ই যাচাই-বাছাই ছাড়াই ভুল সংবাদ প্রচার করে বিতর্কিত হচ্ছে।

সময়োপযোগিতা ও প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনও দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। তবে, ফ্যাক্ট চেকিংকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে দক্ষতার সাথে যথাযথ পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

নিবন্ধটি প্রচার করুন:

⚠️ Copying, Republishing, or Using any content outside of our website (learneraacademy.com), whether for personal, commercial, or educational purpose, is extremely prohibited without prior permission of Learnera Academy. You may share the direct link of pages on social media and through email or other digital media.

This article is written in the Bengali language. References from various sources are mentioned in the reference section (তথ্যসূত্র). Media files are credited in the caption section. If you have any concerns, please get in touch with us at contact@learneraacademy.com

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে
আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

Join As A Content Writer - Learnera Academy
Join As A Content Writer - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ

হলুদ সাংবাদিকতা: কমিকের পাতা থেকে উঠে আসা সাংবাদিকতার অসুস্থ ধারা

ধরুন, একটি সংবাদমাধ্যমে একটি চাঞ্চল্যকর শিরোনাম প্রকাশিত হয়েছে যা হলো: “বিখ্যাত অভিনেত্রীর গোপন বিবাহ!” শিরোনামটি পাঠকদের মনে কৌতূহল জাগায় এবং সংবাদ পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি করে।

ফিচার ইমেজ: ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

বর্তমান পৃথিবীতে খেলাধূলা মানুষের বিনোদনের এক প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর গণমানুষের কাছে খেলাধূলাকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উপভোগ্য করে উপস্থাপন করে চলেছে ক্রীড়া সাংবাদিকগণ। অর্থাৎ

ফিচার ইমেজ: বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

২০০৯ সালের ২৯ মার্চ নবম জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ‘তথ্য অধিকার আইন বিল ২০০৯’ পাস হয়। ৫ এপ্রিল সেই বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে ৬ এপ্রিল আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

ফিচার ইমেজ: শ্রবণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

শ্রবণ প্রক্রিয়া: প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রবণ একটি প্রক্রিয়া এবং বাচনিক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ধরণের যোগাযোগেই শ্রবণের প্রয়োজন হয়। কার্যকর শ্রবণ ব্যতিত যোগাযোগ কখনোই ফলপ্রসূ হয় না।

ফিচার ইমেজ: আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

সহপাঠীদের মধ্যকার সাধারণ সম্পর্কের বাহিরে দুয়েকজন সহপাঠীর সাথে আপনার এই যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে তাই আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বা Interpersonal Relations।

ফিচার ইমেজ: কেস স্টাডি, অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

কেস স্টাডি: অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং কারণ উদ্ঘাটনের প্রয়োজন হলে গবেষকগণ কেস স্টাডি করেন, যেখানে দু’য়েকটি ঘটনার খুঁটিনাটি জেনে বৃহৎ কোনো ঘটনা সামগ্রিকভাবে জানার চেষ্টা করা হয়।

ফিচার ইমেজ: গণমাধ্যম গবেষণায় আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি

আধেয় বিশ্লেষণ: গণমাধ্যম গবেষণায় অত্যাবশ্যকীয় পদ্ধতি

১৯৭১ থেকে ১৯৯৫ সালে সাংবাদিকতা বিষয়ক জার্নালসমূহে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রায় ২৫% ছিল আধেয় বিশ্লেষণ-ভিত্তিক, যা ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মাঝে সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষণার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে ওঠে।

ফিচার ইমেজ: গবেষণা নকশা প্রণয়ন

গবেষণা নকশা: পরিপূর্ণ গবেষণার রূপরেখা প্রণয়ন

যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে নকশা বা পরিকল্পনা প্রণয়ন। গবেষণাও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং, নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে সূচনাতেই গবেষণার সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত
আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Request For Article - Learnera Academy
Request For Article - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Scroll to Top
Learnera Academy Logo