Learnera Academy Logo
Search
Close this search box.

গবেষণা নকশা: পরিপূর্ণ গবেষণার রূপরেখা প্রণয়ন

ফিচার ইমেজ: গবেষণা নকশা প্রণয়ন
ফিচার ইমেজ: গবেষণা নকশা প্রণয়ন

সূচিপত্র

যেকোনো কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে নকশা বা পরিকল্পনা প্রণয়ন। কাজের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ, যেমন – কাজটি কিভাবে করা হবে এবং কাজের বিভিন্ন ধাপকে ক্রমান্বয়ে সাজিয়ে নেয়াই পরিকল্পনা, যা কাজকে সহজ, সংক্ষিপ্ত এবং সফল করে।

কুঞ্জ এবং আইরিচ (Koontz & Weihrich) বলেছেন, “পরিকল্পনা হচ্ছে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা এবং সেগুলো অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নির্বাচন করা;…পরিকল্পনা সেতুবন্ধনের ন্যায় বর্তমান অবস্থান থেকে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়, যাতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল প্রাপ্তিতে বিঘ্ন না ঘটে।”1গ্রন্থ: Management; সংস্করণ: ৯ম; লেখক: Harold Koontz, Heinz Weihrich; প্রকাশক: McGraw-Hill; প্রকাশকাল: ১৯৮৮; উদ্ধৃতি: “Planning involves selecting missions and objectives and the actions to achieve them;…Planning bridges the gap from where we are to where we want to go. It makes it possible for things to occur which would not otherwise happen.”;

গবেষণার ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং গবেষণাপত্রে তার বাস্তবায়নে যথাযথ পরিকল্পনার বিকল্পনা নেই। প্রকৃতপক্ষে গবেষণার নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে গবেষণার শুরু থেকেই একটি সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি লাভ করা যায় এবং তা অনুসরণ করে সমগ্র গবেষণা সুষ্ঠুভাবে সম্পাদিত হয়।

 

গবেষণা নকশা – Research Design

অনুসন্ধানলব্ধ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কোনো বিষয়বস্তুর প্রামাণ্য ও প্রকৃত চিত্র প্রতিষ্ঠাই গবেষণা। এক্ষেত্রে গবেষককে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ এবং সেগুলো পরিমাপ, বিশ্লেষণ করতে হয়। পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় গবেষণার ফলাফল, ব্যাখ্যা, সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা হয়।

যৌক্তিক গবেষণাকর্মের জন্য কি কি তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং প্রাপ্ত তথ্যের সুষ্ঠু ব্যবহার করে কিভাবে সেই গবেষণা পরিচালিত ও সম্পাদিত হবে, এগুলোই নির্ধারণ করে দেয় গবেষণা নকশা বা পরিকল্পনা। ফলশ্রুতিতে গবেষণার কাঙ্ক্ষিত এবং স্বীকৃত ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়।

গবেষণার বিষয়বস্তু, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্থিরকরণ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সাহিত্য পর্যালোচনা, অনুমান গঠন, চলক নির্ধারণ ও সংজ্ঞায়ন, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিন্যস্তকরণ ও বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ ইত্যাদি বিষয়াবলিও গবেষণা নকশার অন্তর্ভুক্ত। মূলত, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের সদ্ব্যবহার এবং যথাযথ পদ্ধতি প্রয়োগ করে গবেষণার নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করার পরিকল্পনাই হচ্ছে গবেষণা নকশা।

বিশিষ্ট গবেষক ফ্রেড এন. কারলিঙ্গারের ভাষ্যমতে, “গবেষণা নকশা হচ্ছে অনুসন্ধানের পরিকল্পনা ও কাঠামো, যা গবেষণার প্রশ্নপত্রের উত্তর সম্পর্কে ধারণা দেয়। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা হচ্ছে গবেষণার সামগ্রিক পদ্ধতি বা কার্যক্রম, যার মাধ্যমে অনুমান গঠন থেকে তথ্যের চূড়ান্ত বিশ্লেষণ পর্যন্ত গবেষক কি করবেন, তার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। অপরপক্ষে, গবেষণার কাঠামো ব্যাখ্যা করা কঠিন যেহেতু কাঠামো শব্দটিই সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট নয়।…একটি কাঠামো হচ্ছে নির্দিষ্ট উপায়ে প্রাসঙ্গিক কাঠামোর উপাদানগুলোর গঠন, সংগঠন বা আকৃতি।”2গ্রন্থ: Foundation of Behavioral Research; সংস্করণ: ৪র্থ; লেখক: Fred N. Kerlinger, howard B. Lee; প্রকাশক: Harcourt College Publishers; প্রকাশকাল: ২০০০; উদ্ধৃতি: “Research Design is the plan and structure of investigation, conceived so as to obtain answers to research questions. The plan is overall scheme or program of the research. It indicates an outline of what the investigator will do, from writing the hypotheses and their operational implications to the final analysis of data. The structure of research is harder to explain because the word structure is difficult to define clearly and unambiguously….A structure is the framework, organization, or configuration of elements of the structure related in specified ways.”

সমাজবিজ্ঞানী আর্ল ব্যাবি বলেছেন, “কেন এবং কিভাবে – গবেষণার প্রাক্বালে এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা গবেষকের জন্য অতি আবশ্যিক। এই কাজটিই গবেষণা নকশা।3গ্রন্থ: The Practice of Social Research; সংস্করণ: ১২তম; লেখক: Earl R. Babbie; প্রকাশক: Wadsworth Cengage Learning; প্রকাশকাল: ২০০৪; উদ্ধৃতি: “You need to determine what you’re going to observe and analyze: why and how. That’s what research design is all about.”

সমাজ মনোবিজ্ঞানী ক্লেয়ার সেল্টিজ এসম্পর্কে লিখেছেন, “গবেষণা নকশা হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের শর্তাবলীর এমন বিন্যাস, যা গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে আর্থসামাজিক প্রাসঙ্গিকতাকে সম্পৃক্ত করে।”4গ্রন্থ: Research Methods in Social Relations; সংস্করণ: ১ম (পরিমার্জিত); লেখক: Claire Selltiz, Marie Jahoda, Morton Deutsch, Stuart W. Cook; প্রকাশক: Holt, Rinehart & Winston, Inc; প্রকাশকাল: ১৯৫৯; উদ্ধৃতি: “A research design is the arrangement of conditions for collection and analysis of data in a manner that aims to combine relevance to the research purpose with economy in procedure.”

 

গবেষণা নকশার উদ্দেশ্য – Objectives of Research Design

মনোবিজ্ঞানী ক্লেয়ার সেল্টিজ-র মতে, গবেষণা নকশা স্বভাবগতভাবে অনুসন্ধান, বর্ণনা কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক হয়ে থাকে। এর ভিত্তিতে গবেষক জেমস ব্ল্যাক এবং ডিন চ্যাম্পিয়ন তাদের ‘Methods and Issues in Social Research’ গ্রন্থে গবেষণা নকশার তিন ধরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন।5গ্রন্থ: Methods and Issues in Social Research; সংস্করণ: ১ম; লেখক: James A. Black, Dean J. Champion; প্রকাশক: John Wiley & Sons, Inc; প্রকাশকাল: 1976; যথা –

 

অনুসন্ধানমূলক উদ্দেশ্য – Exploratory Objectives

গবেষণা নকশার উদ্দেশ্যকে অনুসন্ধানমূলক বলার কারণ হচ্ছে, এর মাধ্যমে নতুন গবেষকদের অনুসন্ধানী হতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। মূলত, গবেষণা নকশা প্রণয়নের মাধ্যমেই নবীন গবেষকদের গবেষণায় হাতেখড়ি হয়। তারা গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ, নমুনায়ন, সাক্ষাৎকার ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন।

আবার, অভিজ্ঞ গবেষকদের গবেষণার ক্ষেত্রে সমগ্রক নির্ধারণ, তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, গবেষণা পদ্ধতি এবং আর্থিক দিক বিবেচনায়ও গবেষণা নকশা সহায়তা করে। এগুলোই গবেষণা নকশার অনুসন্ধানমূলক উদ্দেশ্য।

 

বর্ণনামূলক উদ্দেশ্য – Descriptive Objectives

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সামাজিক গবেষণা হয়ে থাকে অধিকতর বর্ণনামূলক বা ব্যাখ্যা-ভিত্তিক। এসব গবেষণায় বৈজ্ঞানিক গবেষণার ন্যায় তাত্ত্বিক আলোচনার চেয়ে সমাজের বিভিন্ন ঘটনাবলি এবং সেসবের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়।

গবেষণা নকশা প্রণয়ন করা হলে কোন বিষয়গুলো অধ্যয়ন এবং বিশ্লেষণ করা উচিত, তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়। এধরণের গবেষণায় সুনির্দিষ্ট সমগ্রক বা তথ্যের উৎস থাকে এবং নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয় বলে পরবর্তীতে আরও গবেষণার মাধ্যমে অন্যান্য দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি বর্ণনার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

 

পরীক্ষামূলক উদ্দেশ্য – Experimental Objectives

গবেষণা নকশা প্রণয়নের মাধ্যমে গবেষণার পূর্বেই সমগ্রক, চলক, কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে গবেষক প্রাথমিক কিছু ধারণা পেয়ে যান। এই ধারণা থেকে তিনি সমগ্রক ও চলকগুলো নিয়ে পরীক্ষণের মাধ্যমে কারণ ও ফলাফলের বিভিন্ন দিক উদ্ঘাটন করতে পারেন।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ওপর একই বিষয়ের ভিন্ন প্রভাব পরীক্ষণ করা হয়। সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রেও এধরণের অধ্যয়ন হয়ে থাকে। গবেষণা নকশার অন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে এধরণের পরীক্ষার উৎসের সন্ধান দেয়া।

 

গবেষণা নকশার প্রায়োগিকতা – Functions of Research Design

একটি যৌক্তিক এবং ফলপ্রসূ গবেষণায় নকশা প্রণয়ন আবশ্যিক। গবেষণা নকশা গবেষককে একদিকে যেমন গবেষণাকর্ম পদ্ধতিগত দিক থেকে সুষ্ঠু ও সঠিকভাবে সম্পাদন করতে সহায়তা করে, অপরদিকে সংগৃহীত তথ্য, নমুনা এবং সেগুলো বিশ্লেষণের সর্বাধিক উপযোগিতা সৃষ্টি করে। 

গ্রহণযোগ্য গবেষণাপত্র তৈরিতে গবেষণা নকশা অপরিহার্য। গবেষণার ধরণ যেমনি হোক না কেন, গবেষণা নকশা প্রণয়ন করা জরুরি। আবার ধরণভেদে গবেষণা নকশা ভিন্ন ভিন্ন হলেও এর সুনির্দিষ্ট কিছু প্রায়োগিকতা রয়েছে।

‘Methods and Issues in Social Research’ গ্রন্থে গবেষণা নকশার তিনটি প্রায়োগিক ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে –

 

সামাজিক ঘটনাবলি অধ্যয়নে গবেষককে নীলনকশা প্রদান – Provide the Researcher with a BluePrint for Studying Social Questions

গবেষণা নকশার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রায়োগিক ক্ষেত্র হচ্ছে সমাজ এবং সমাজস্থ বিভিন্ন ঘটনাবলি সম্পর্কিত গবেষণা। এক্ষেত্রে গবেষণা নকশা গবেষককে গবেষণার নীলনকশা তথা সামগ্রিক বিষয়াবলী সম্পর্কে ধারণা ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করে।

সমাজ-কেন্দ্রিক গবেষণায় যথাযথ পরিকল্পনা ব্যতীত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করলে গবেষক নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে চূড়ান্ত গবেষণাকর্ম শুরুর পূর্বেই কিছু বিষয় নির্বাচন করে নিতে হয়। যেমন: 

  • সমগ্রক বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বর্ণনা – Description of Target Population
  • নমুনা বাছাই পদ্ধতি – Sampling Methods
  • নমুনার আকৃতি বা পরিমাণ – Size of Sample
  • তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি – Data Collection Procedures
  • তথ্য বিশ্লেষণের সম্ভাব্য পদ্ধতি – Possible Ways of Analyzing the Data
  • সংখ্যাগত পরীক্ষণ হবে কি না এবং হলে, তা কি? – Whether or not to use statistical tests, and if so, Which One(s)?

এসব প্রশ্নের উত্তর গবেষণার পূর্বেই প্রস্তুত করা প্রয়োজন। গবেষণা নকশা প্রণয়ন করলে গবেষণা প্রস্তাব, বিবরণী এবং রূপরেখা তৈরিতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর উপস্থাপন সহজ হয়।

 

গবেষণার সীমারেখা নির্ধারণ এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পরিচালন – Dictate Boundaries of Research Activity & Enable to Channel in Specific Directions

গবেষণা ফলপ্রসূ করতে অন্যতম প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গবেষণার বিষয়বস্তু বা সীমারেখা এবং কেন গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে, সেই লক্ষ্য সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা। তারপর সেই লক্ষ্য অর্জনে সুনির্দিষ্টভাবে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করতে হয়।

নির্দিষ্ট সীমারেখা এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যতীত গবেষণা কার্যক্রম গন্তব্যহীন বা ফলশুন্য কর্মপ্রয়াসে পরিণত হয়। সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই কেবল গবেষক সুশৃঙ্খলভাবে লক্ষ্য অর্জনের দিকে অগ্রসর হতে পারেন। গবেষণা নকশা কর্তৃক প্রদত্ত কাঠামো গবেষককে গবেষণাকর্ম যথাযথভাবে সম্পাদন এবং কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে সহায়তা করে।

বিষয়বস্তু অধ্যয়নে সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করণ – Enable to Anticipate Potential Problems in the Implementation of the Study

গবেষণার প্রয়োজনে গবেষককে বিষয়বস্তু-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গবেষণাপত্র, গ্রন্থ, প্রবন্ধ পর্যালোচনা করতে হয়। এর মাধ্যমে গবেষক বিষয়টি গবেষণার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, নতুন ও বিকল্প পদ্ধতি জানতে পারেন এবং গবেষণাকালীন কি প্রয়োজন বা ঘটতে পারে, সেসম্পর্কে ধারণা পান। 

উপরন্তু, অনেক গবেষণায় ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য নির্দেশনা থাকে। সমালোচনা বা সীমাবদ্ধতাও যুক্ত করা হয়, যাতে যেসব দিক সেই গবেষণায় উঠে আসে নি, সেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে যেন উন্নতর গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা হয়।

গবেষণার তথ্য সংগ্রহ ও নমুনা বিশ্লেষণে কি ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, গবেষণা নকশার মাধ্যমে সেগুলোও চিহ্নিত করা যায়। সমগ্র গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার খরচ বা বাজেট সম্পর্কে ধারণা পেতেও গবেষণা নকশা অপরিহার্য। 

 

গবেষণা নকশার উপাদান – Elements of Research Design

গবেষণা নকশার প্রকৃতি নির্ভর করে গবেষণার ধরণ এবং ধাপগুলোর ওপর। গবেষণার বিষয়বস্তু মৌলিক বা তাত্ত্বিক নাকি ফলিত, গবেষণার ধরণ গুণগত, পরিমাণগত নাকি মিশ্র ধরণের, গবেষণার তথ্য-উপাত্ত মাঠ-পর্যায়ে গিয়ে সংগ্রহ করা হবে নাকি গবেষণাগারে পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে করা হবে ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে গবেষণা নকশায় ভিন্নতা দেখা যায়।

গণমাধ্যমে আমরা যেসব অনুসন্ধানমূলক সংবাদ এবং ডকুমেন্টারি দেখি, সেগুলোও এক ধরণের গবেষণা। সেক্ষেত্রে গবেষণা নকশা হয় এক ধরণের। আবার, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষণা নকশা হয় ভিন্ন ধরণের।

গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক কিছুটা স্বাধীনতা পান। তিনি যেসব পদ্ধতি ও ধরণ উপযোগী মনে করেন, সেসব দিয়েই গবেষণাকর্ম পরিচালনা করতে পারেন। এরূপ নমনীয়তা সত্ত্বেও সকল গবেষণাকর্মেই কিছু বিষয়ের উপস্থিতি সর্বদাই থাকে। 

সেই বিষয়গুলোকেই গবেষণা নকশার উপাদান বলা হয় এবং সেগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমেই গবেষণা নকশা প্রণয়ন করা হয়। একে গবেষণা নকশা প্রণয়নের ধাপ-ও বলা যেতে পারে। 

এই উপাদানগুলোর পারস্পারিক নির্ভরশীলতা এতই নিবিড় যে, গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়েই ক্ষেত্রবিশেষে গবেষণার চূড়ান্ত প্রকৃতি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে গবেষণা নকশার উপাদানগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে আলোচনা করা হল –

 

গবেষণার শিরোনাম – Title of the Research

গবেষণার প্রথম ধাপ হচ্ছে শিরোনাম নির্ধারণ। শিরোনামটি হতে হবে সংক্ষিপ্ত তবে সুস্পষ্ট। গবেষণার বিষয়বস্তু এবং পরিধি প্রকৃত অর্থে উপস্থাপন করে, এমন শব্দ ব্যবহার করতে হবে। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে শব্দ চয়ন ও প্রয়োগে।

শিরোনামটি সহজবোধ্য এবং পরিপূর্ণ অর্থবাচক হতে হবে। শিরোনামই গবেষণার বিষয়বস্তু এবং সমগ্র গবেষণাকে সংক্ষিপ্তাকারে উপস্থাপন করে। গবেষণা নকশা প্রণয়নকালীন তাই শিরোনামও নির্ধারণ করা হয়।

 

গবেষণার বিষয়বস্তু বর্ণনা – Statement of the Research Topic

বিষয়বস্তু বর্ণনা গবেষণার অন্যতম প্রাথমিক এবং মৌলিক ধাপ। এপর্যায়ে যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করা হবে, সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর পূর্বাপর, অর্থাৎ অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের বিভিন্ন চিত্র তুলে হয়, যাতে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পেতে সুবিধা হয়।

সর্বোপরি, বিষয়বস্তুর কোন দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করা হবে, তা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণ এবং বর্ণনায় অস্পষ্টতা বা দুর্বোধ্যতা থাকলে পরবর্তী পর্যায়ে গবেষণা জটিল হয়ে ওঠে। এজন্য গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণ ও বর্ণনার কাজটি অতি গুরুত্বপূর্ণ।

 

গবেষণার উদ্দেশ্য – Objectives of the Research

গবেষণা নকশা যে ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তা হচ্ছে গবেষণার উদ্দেশ্য নির্বাচন। এর মাধ্যমে কি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা হচ্ছে, তা সুনির্দিষ্ট করা হয়। উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা না থাকলে কখনোই গবেষণার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন সম্ভব নয়। এজন্য উদ্দেশ্য নির্ধারণকে গবেষণাকর্মের ‘কার্যগত নির্দেশনা’ (Functional Guidelines) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

গবেষণায় এক বা একাধিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। গবেষণার পরিধি ও বিষয়বস্তুর প্রাসঙ্গিকতা এবং গবেষকের আগ্রহ ও আর্থিক সঙ্গতি ইত্যাদি বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে গবেষণার উদ্দেশ্যের ব্যাপ্তি। তবে উদ্দেশ্যের সংখ্যা যতই হোক না কেন, সেগুলো অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে। 

এসবের মাঝে গবেষণার প্রধান ও অপ্রধান উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে গুরুত্বের ক্রম অনুসারে উদ্দেশ্যগুলো উল্লেখ করতে হবে। অধিকতর গুরুত্তারোপ করতে হবে প্রধান উদ্দেশ্য অর্জনে।

 

গবেষণার যৌক্তিকতা – Rationality of the Research

প্রতিটি গবেষণার ক্ষেত্রেই গবেষণার যৌক্তিকতা বা গুরুত্বের নীতি বিবেচনায় রাখতে হবে। গবেষণার জন্য ব্যয়কৃত সময়, শ্রম ও অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এমন কোনো বিষয়ে গবেষণা করা উচিত নয়, যার সামাজিক, বৈজ্ঞানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্ব নেই।

গবেষণাটি নতুন কোনো তত্ত্ব বা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সূত্র দিচ্ছে কিনা, কোন সামাজিক সমস্যা সমাধান বা সামাজিক উন্নয়নে ভূমি রাখবে কি না – সর্বোপরি, জ্ঞানের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে কি না, এসব প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। 

যথেষ্ট যৌক্তিকতা এবং উপযোগিতা থাকলেই কেবল কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। গবেষণা নকশার অন্যান্য উপাদানগুলো পর্যালোচনা করে গবেষণার যৌক্তিকতা নির্ধারণ করা যায়।

 

সাহিত্য পর্যালোচনা – Literature Review

সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রন্থ, প্রবন্ধ, গবেষণাকর্ম ইত্যাদি অধ্যয়নের মাধ্যমে গবেষণার বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা লাভের প্রচেষ্টা করা হয়। গবেষণার উদ্দেশ্য, যৌক্তিকতা, পদ্ধতি প্রভৃতি নির্ধারণ ও উন্নয়নেও সাহিত্য পর্যালোচনা জরুরি।

সাহিত্য পর্যালোচনার নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। নতুন ক্ষেত্রগুলোতে গবেষণাপত্রের সংখ্যা কম বলে সাহিত্য পর্যালোচনার মাধ্যমে সম্যক ধারণা নেয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু, প্রতিষ্ঠিত বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রচুর গবেষণাপত্র থাকলেও সকল সাহিত্য পর্যালোচনা বাস্তবে সম্ভব নয়। তবে, সাহিত্য পর্যালোচনার পরিমাণ যত বেশি হবে, উক্ত বিষয়ের সাথে গবেষকের পরিচিতি ও অভিজ্ঞতাও তত বৃদ্ধি হবে, গবেষণাকর্ম হবে অধিক সমৃদ্ধ। 

উল্লেখ্য, গবেষণা প্রস্তাবনার শেষে পর্যালোচনাকৃত সাহিত্য তথ্যসূত্র (Reference) অংশে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করতে হবে। আবার, সাহিত্য পর্যালোচনা করে যদি প্রতীয়মান হয় যে গবেষণার জন্য নির্ধারিত বিষয়বস্তুর ওপর ইতোমধ্যেই যথেষ্ট গবেষণা সম্পাদিত হয়েছে, সেক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে গবেষণার প্রয়োজন নেই। পরিমাণগত গবেষণা হলে কালের বিবর্তনে উক্ত বিষয়বস্তু নিয়ে নতুনভাবে গবেষণা করা যেতে পারে।

 

তাত্ত্বিক কাঠামো – Theoretical Framework

গবেষণার এপর্যায়ে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে কোন কোন স্বীকৃত তত্ত্ব, ধারণা, প্রস্তাবনা, সংজ্ঞা ইত্যাদি প্রয়োগ করা হবে, তা নির্ধারণ করবেন। যথাযথ তত্ত্বের প্রয়োগই কেবল গবেষণাকে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য করতে পারে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে তত্ত্ব গঠন ও প্রয়োগকে গবেষণার আত্মা (Neur of the Research) বলে অভিহিত করা হয়। কারণ, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিটি গবেষণা প্রয়োগযোগ্য কোনো তাত্ত্বিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। 

প্রতিষ্ঠিত কোনো তত্ত্ব যদি গবেষণার বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে যথেষ্ট উপযোগী না হয়, তাহলে গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে গবেষক নতুন তত্ত্ব নির্মাণ এবং উপস্থাপন করতে পারেন।

 

অনুমান গঠন – Hypothesis Building

গবেষণার অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে অনুমান গঠন বা পূর্বানুমান। সাহিত্য পর্যালোচনা, তাত্ত্বিক কাঠামো, গবেষকের পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা প্রভৃতির মাধ্যমে অনুমান গঠন করা হয়। অতঃপর সেই অনুমানকে পরীক্ষাযোগ্য আকারে (Testable Form) উপস্থাপন করা হয়। গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখেই অনুমান গঠন এবং এবং এর সংখ্যা ও উপস্থাপনের ধরণ নির্ধারণ করতে হবে।  

অনুমান গবেষণার চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। গবেষণার পরবর্তী পর্যায়সমূহে মূলত অনুমানের সত্যাসত্য পরীক্ষা করা হয়। কেননা, গবেষণার ফলাফল প্রাপ্তির পূর্বে অনুমান যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। অনুমান সত্য হিসেবে গৃহীত হলে তার ভিত্তিতে চূড়ান্ত গবেষণা হয়। অসত্য বা আংশিক সত্য হলে সেই অংশ বাদ দিয়ে কিংবা আরেকটি অনুমানের ভিত্তিতে গবেষণা সম্পাদন করা হয়।

 

চলক নির্ধারণ – Variables Specification

সামাজিক গবেষণায় চলক নির্ধারণ একটি মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এপর্যায়ে গবেষণায় ব্যবহৃত চলকগুলো চিহ্নিত ও নির্দিষ্ট করা হয়। প্রতিটি গবেষণায় সাধারণত নির্ভরশীল এবং অনির্ভরশীল – এই দু’ধরনের চলক থাকে। এক্ষেত্রে, কোনটি নির্ভরশীল এবং কোনটি অনির্ভরশীল চলক তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। 

গবেষণায় কোনো নিয়ন্ত্রিত চলক থাকলে তাও নির্ধারণ করা প্রয়োজন। উদাহরণ-স্বরূপ, “গ্রামীণ সমাজে রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা” – এই গবেষণায় পরিবারের ভূমিকা” হচ্ছে নির্ভরশীল চলক। পরিবারের ভূমিকা নির্ভর করে মূলত পরিবারের কাঠামো, পরিবারের শিক্ষা, পরিবার প্রধানের ইচ্ছা, পারিবারিক আয়, পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য ইত্যাদি উপাদানের ওপর। এসব উপাদান অনির্ভরশীল চলক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

এগুলো বাদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ইত্যাদি উপাদান হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত চলক। কেননা, রাজনৈতিক সামাজিকীকরণে পরিবার ছাড়াও এসব প্রতিষ্ঠান ভূমিকা পালন করে এবং গবেষণার প্রয়োজনে এসব চলককে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

 

পরিমাপ – Measurement

বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় অধ্যয়নের বিষয়বস্তুর পরিমাপের প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণযোগ্য ও পরিমাপযোগ্য নয়, সেগুলোকে বিজ্ঞান স্বীকৃতি দেয় না। সামাজিক গবেষণায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষয়বস্তুর নির্দিষ্ট সংখ্যাগত পরিমাপ করা যায় না। পরিমাপের পর্যায় (Level) এবং পরিমাপক (Scale) নির্ধারণের মাধ্যমে গুণগত পরিমাপ করা হয়। 

গবেষণা যে ধরণেরই হোক না কেন, ব্যবহৃত চলকগুলো পরিমাপযোগ্য কিনা, তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। যাতে গবেষণার পরবর্তী পর্যায়গুলোতে চলকগুলো পরিমাপ করা যায়। এক্ষেত্রে, গবেষক কোন ধরনের পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন, তা নির্ভর করবে গবেষণার বিষয়বস্তুর ওপর।

 

তথ্যের উৎস – Sources of Data

গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের উৎস গবেষণা নকশার অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে। সাধারণত, প্রাথমিক (Primary) এবং মাধ্যমিক (Secondary) – এই দুই ধরনের উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোন ধরনের উৎস থেকে তথ্য সংগৃহীত হবে, তা গবেষক এবং গবেষণার বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভরশীল। তবে গ্রহণযোগ্য গবেষণাপত্র তৈরিতে উভয় উৎস থেকেই তথ্য সংগ্রহের বিকল্প নেই।

সরাসরি মাঠ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য, যেগুলো পূর্ববর্তী কোনো গবেষণায় ব্যবহৃত হয় নি, সেগুলো প্রাথমিক উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য। অন্যদিকে, মাধ্যমিক পর্যায়ের উৎস হচ্ছে বইপুস্তক, প্রবন্ধ, গবেষণাকর্ম, সংবাদপত্র, দলিলপত্র ইত্যাদি। উভয় ক্ষেত্রেই উৎস এবং তথ্যের যথার্থতা পরীক্ষা করা শ্রেয়।

 

বিশ্লেষণের একক – Unit of Analysis

উৎস নিরূপণের পর তথ্য বিশ্লেষণের একক নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ, উৎস (কিভাবে) থেকে সুনির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা বস্তু (কে বা কোথায়/কিসে) থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তা চিহ্নিত করতে হবে। সামাজিক গবেষণায় সাধারণত ব্যক্তি, দল, সংগঠন এবং বই, কবিতা, চিত্রকলা, স্থাপত্য, গান ইত্যাদি সামাজিক উপাদান বিশ্লেষণের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

গবেষণায় বিশ্লেষণের একক কি হবে, তা নির্ভর করে গবেষণার বিষয়বস্তুর ওপর। যেমন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মানুষের চিন্তাভাবনা জানা যদি গবেষণার বিষয়বস্তু হয়, এক্ষেত্রে ব্যক্তি (Individuals) বিশ্লেষণের একক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথের দর্শন গবেষণার বিষয়বস্তু হলে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন কবিতা, গল্প, উপন্যাস বিশ্লেষণের একক হিসেবে ব্যবহৃত হবে। একক যাই হোক না কেন, গবেষণা নকশায় তার উল্লেখ রাখতে হবে।

 

সমগ্রক ও নমুনা – Population & Sample

এপর্যায়ে গবেষণায় যে সমগ্রক অধ্যয়ন করা হবে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হবে। সমগ্রকের বিস্তারিত বর্ণনার পর শুমারি অথবা নমুনায়ন পদ্ধতিতে তা থেকে চূড়ান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নমুনায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করলে কোন ধরনের নমুনায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে, কেন করা হবে, নমুনার আকার কিরূপ ইত্যাদির বর্ণনাও যুক্ত করতে হবে।

 

তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি – Method of Data Collection

সামাজিক গবেষণায় সাধারণত তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি হিসেবে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, সাক্ষাৎকার, প্রশ্নপত্র ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। কোন পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হবে, কেন এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে – এসব ব্যাপারে গবেষণা প্রস্তাবে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। 

একই গবেষণায় একাধিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তথ্য সংগ্রহ হলে সেক্ষেত্রে প্রতিটি পদ্ধতির স্বতন্ত্র বর্ণনা এবং এগুলো অনুসরণের কারণ ও যৌক্তিকতা উল্লেখ করতে হবে।

 

তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা – Reliability & Validity of Data

গবেষণার জন্য সংগৃহীত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যিক। কেননা, গবেষণার ফলাফল তথ্যের ওপরই নির্ভরশীল। উৎস এবং তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা ও যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ থাকলে সেসব তথ্য পরিত্যাগ করতে হবে।

সামাজিক গবেষণায় নির্ভরযোগ্য ও সঠিক তথ্য প্রাপ্তি বেশ কঠিন। এজন্য ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র প্রণয়নের পর প্রয়োজনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তথ্য সংগ্রাহকের দ্বারস্থ হতে হবে। পরবর্তীতে অভিজ্ঞ গবেষকদের তত্ত্বাবধানে সেসব তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করতে হবে। সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণে গবেষক কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, এব্যাপারে গবেষণা নকশায় বিস্তারিত বিবরণ লিখতে হবে।

 

তথ্য বিন্যস্তকরণ ও উপস্থাপন – Data Processing & Representation

বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও সত্যয়নের পর সেগুলো সম্পাদনা, সংকেতায়ন, শ্রেণীকরণ ও সারণিবদ্ধ করা হয়। বিষয়বস্তু বিবেচনায় তথ্যের এই বিন্যাস এবং উপস্থাপন বিভিন্ন ধরণের হয়। এই পর্যায়ে গবেষককে এগুলোর নকশা তৈরি করতে হবে। 

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তথ্যের সুবিন্যস্তকরণ যথেষ্ট হলেও সামাজিক গবেষণায় এগুলোকে রেখাচিত্র, লেখচিত্র ইত্যাদির মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা নকশায় তথ্যকে কিভাবে উপস্থাপন করা হবে, তার বিবরণও দিতে হবে।

 

তথ্য বিশ্লেষণ – Data Analysis

গবেষণার অন্যতম ভিত্তি এবং মৌলিক ধাপ হচ্ছে তথ্য বিশ্লেষণ। গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটির ওপরেই নির্ভর করে গবেষণার ফলাফল। বিশ্লেষণ যত গভীর ও বস্তুনিষ্ঠ হয়, গবেষণার ফলাফল হয় তত সমৃদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য।

কোন প্রক্রিয়ায়, কি পদ্ধতি, কোন দৃষ্টিকোণ থেকে থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে, এসব বিষয়াবলী গবেষণা নকশায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ – Report Writing

গবেষণার চূড়ান্ত পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রতিবেদন বা কি ধরণের ফলাফল, সিদ্ধান্ত উপস্থাপিত হবে, তা সম্পর্কে একটি ধারণা বা খসড়া প্রতিবেদন গবেষণা নকশায় উল্লেখ করা হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে সম্পন্ন অনুমান চূড়ান্ত পর্যায়ে সত্য প্রমাণিত হবে কি না, হলে তা কিরূপ হবে, এসবের বর্ণনাই থাকে এখানে। এর মধ্য দিয়ে গবেষণা নকশার প্রাতিষ্ঠানিক ও তাত্ত্বিক পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।

 

জনবল সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ – Collecting & Training Personnel

গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষক, তথ্য সংগ্রাহক, তথ্য বিন্যস্তকারী, মুদ্রাক্ষরিক ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গের সহায়তা প্রয়োজন হয়। সমগ্র গবেষণা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে কাকে এবং কত জনবল লাগবে এবং তাদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, গবেষণা নকশায় তার আনুমানিক সংখ্যা ও বর্ণনা লিপিবদ্ধ করতে হবে।

 

সময়সূচি – Schedule

গবেষণার সকল কাজ সম্পূর্ণ করতে কত সময় প্রয়োজন এবং কোন পর্যায়ে কত সময় ব্যয় করা হবে – গবেষণা নকশায় তা উল্লেখ করা হয়। সময়সূচি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গবেষণাকর্ম সম্পন্ন করতে গবেষককে সহায়তা করে।

 

বাজেট – Budget

গবেষণাকর্ম পরিচালনা এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অর্থের প্রয়োজন। ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়নে পরিচালিত হলেও গবেষণার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকে।

তাই, কোন উৎস থেকে অর্থের যোগান হবে এবং কোন খাতে কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হবে, তা নির্ধারণ করা অত্যাবশকীয়। বাজেট প্রণয়নের মাধ্যমে গবেষণা নকশায় এই বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

 

গবেষণা নকশা গবেষককে পদ্ধতিগত ও কৌশলগত সহায়তার পাশাপাশি তথ্য, অর্থ, সময় ও শ্রমের সদ্ব্যবহারের সর্বাধিক উপযোগিতা নিশ্চিত করে। চিন্তা-নির্ভর এবং বুদ্ধিবৃত্তিক হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লিখিতভাবে গবেষণার নকশা প্রণয়ন করা হয় না। তবুও গবেষণাকর্মের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে গবেষণার নকশা প্রণয়নের গুরুত্ব অবর্ণনীয়।

 

তথ্যসূত্র - References

  • 1
    গ্রন্থ: Management; সংস্করণ: ৯ম; লেখক: Harold Koontz, Heinz Weihrich; প্রকাশক: McGraw-Hill; প্রকাশকাল: ১৯৮৮; উদ্ধৃতি: “Planning involves selecting missions and objectives and the actions to achieve them;…Planning bridges the gap from where we are to where we want to go. It makes it possible for things to occur which would not otherwise happen.”;
  • 2
    গ্রন্থ: Foundation of Behavioral Research; সংস্করণ: ৪র্থ; লেখক: Fred N. Kerlinger, howard B. Lee; প্রকাশক: Harcourt College Publishers; প্রকাশকাল: ২০০০; উদ্ধৃতি: “Research Design is the plan and structure of investigation, conceived so as to obtain answers to research questions. The plan is overall scheme or program of the research. It indicates an outline of what the investigator will do, from writing the hypotheses and their operational implications to the final analysis of data. The structure of research is harder to explain because the word structure is difficult to define clearly and unambiguously….A structure is the framework, organization, or configuration of elements of the structure related in specified ways.”
  • 3
    গ্রন্থ: The Practice of Social Research; সংস্করণ: ১২তম; লেখক: Earl R. Babbie; প্রকাশক: Wadsworth Cengage Learning; প্রকাশকাল: ২০০৪; উদ্ধৃতি: “You need to determine what you’re going to observe and analyze: why and how. That’s what research design is all about.”
  • 4
    গ্রন্থ: Research Methods in Social Relations; সংস্করণ: ১ম (পরিমার্জিত); লেখক: Claire Selltiz, Marie Jahoda, Morton Deutsch, Stuart W. Cook; প্রকাশক: Holt, Rinehart & Winston, Inc; প্রকাশকাল: ১৯৫৯; উদ্ধৃতি: “A research design is the arrangement of conditions for collection and analysis of data in a manner that aims to combine relevance to the research purpose with economy in procedure.”
  • 5
    গ্রন্থ: Methods and Issues in Social Research; সংস্করণ: ১ম; লেখক: James A. Black, Dean J. Champion; প্রকাশক: John Wiley & Sons, Inc; প্রকাশকাল: 1976;
নিবন্ধটি প্রচার করুন:

⚠️ Copying, Republishing, or Using any content outside of our website (learneraacademy.com), whether for personal, commercial, or educational purpose, is extremely prohibited without prior permission of Learnera Academy. You may share the direct link of pages on social media and through email or other digital media.

This article is written in the Bengali language. References from various sources are mentioned in the reference section (তথ্যসূত্র). Media files are credited in the caption section. If you have any concerns, please get in touch with us at contact@learneraacademy.com

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে
আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

Join As A Content Writer - Learnera Academy
Join As A Content Writer - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক নিয়ে আপনার সেরা লেখাগুলো প্রকাশ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা ও নয়া মাধ্যমে সচেতনতা তৈরিতে আমাদের এই অগ্রযাত্রার সঙ্গী হোন আপনিও। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার লেখাগুলো আজই পাঠিয়ে দিন, নির্বাচিত লেখাগুলো সম্মানীসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ

হলুদ সাংবাদিকতা: কমিকের পাতা থেকে উঠে আসা সাংবাদিকতার অসুস্থ ধারা

ধরুন, একটি সংবাদমাধ্যমে একটি চাঞ্চল্যকর শিরোনাম প্রকাশিত হয়েছে যা হলো: “বিখ্যাত অভিনেত্রীর গোপন বিবাহ!” শিরোনামটি পাঠকদের মনে কৌতূহল জাগায় এবং সংবাদ পড়তে আগ্রহ সৃষ্টি করে।

ফিচার ইমেজ: ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

ক্রীড়া সাংবাদিকতার সাত-সতেরো

বর্তমান পৃথিবীতে খেলাধূলা মানুষের বিনোদনের এক প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর গণমানুষের কাছে খেলাধূলাকে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে উপভোগ্য করে উপস্থাপন করে চলেছে ক্রীড়া সাংবাদিকগণ। অর্থাৎ

ফিচার ইমেজ: বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯

২০০৯ সালের ২৯ মার্চ নবম জাতীয় সংসদের ১ম অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে ‘তথ্য অধিকার আইন বিল ২০০৯’ পাস হয়। ৫ এপ্রিল সেই বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিলে ৬ এপ্রিল আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

ফিচার ইমেজ: শ্রবণ প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

শ্রবণ প্রক্রিয়া: প্রাথমিক ধারণা এবং ধাপসমূহ

যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রবণ একটি প্রক্রিয়া এবং বাচনিক যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল ধরণের যোগাযোগেই শ্রবণের প্রয়োজন হয়। কার্যকর শ্রবণ ব্যতিত যোগাযোগ কখনোই ফলপ্রসূ হয় না।

ফিচার ইমেজ: আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক এবং তা গঠনের ধাপসমূহ

সহপাঠীদের মধ্যকার সাধারণ সম্পর্কের বাহিরে দুয়েকজন সহপাঠীর সাথে আপনার এই যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যোগাযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে তাই আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক বা Interpersonal Relations।

ফিচার ইমেজ: কেস স্টাডি, অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

কেস স্টাডি: অনুসন্ধানমূলক গবেষণার জনপ্রিয় পদ্ধতি

গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ এবং কারণ উদ্ঘাটনের প্রয়োজন হলে গবেষকগণ কেস স্টাডি করেন, যেখানে দু’য়েকটি ঘটনার খুঁটিনাটি জেনে বৃহৎ কোনো ঘটনা সামগ্রিকভাবে জানার চেষ্টা করা হয়।

ফিচার ইমেজ: গণমাধ্যম গবেষণায় আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি

আধেয় বিশ্লেষণ: গণমাধ্যম গবেষণায় অত্যাবশ্যকীয় পদ্ধতি

১৯৭১ থেকে ১৯৯৫ সালে সাংবাদিকতা বিষয়ক জার্নালসমূহে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের প্রায় ২৫% ছিল আধেয় বিশ্লেষণ-ভিত্তিক, যা ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সালের মাঝে সাংবাদিকতা বিষয়ক গবেষণার সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি হয়ে ওঠে।

ফিচার ইমেজ: বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাসমূহ

বাংলায় ফ্যাক্ট চেক: বাংলাদেশের শীর্ষ ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থাসমূহ

বাংলাদেশে স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থার পাশপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কয়েকটি গণমাধ্যম ফ্যাক্ট চেকিং নিয়ে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং নেটওয়ার্ক (IFCN) স্বীকৃত এবং নির্ভরযোগ্য এমন কিছু ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান হচ্ছে

যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত
আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Request For Article - Learnera Academy
Request For Article - Learnera Academy
যোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও ফ্যাক্ট চেক সম্পর্কিত আপনার প্রয়োজনীয় নিবন্ধ প্রকাশের অনুরোধ করুন!

গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও নয়া মাধ্যমকে সকলের নিকট বোধগম্য করে তুলতে আমাদের এই প্রচেষ্টা। যোগাযোগ, সাংবাদিকতা, গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক বিষয়ক যেকোনো তথ্য ও নিবন্ধ প্রয়োজন হলে আমাদের জানান। আপনার অনুরোধকৃত বিষয়ে আমরা মানসম্পন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করবো।

Scroll to Top
Learnera Academy Logo